সুইচগিয়ার এর উপাদানঃ সার্কিট ব্রেকার, রিলে, ইন্সট্রুমেন্ট ট্রান্সফরমা, বাসবার, কন্ডাকটর সম্পর্কে বিস্তারিত...



ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং সেক্টরে একটি গুরুত্বপূর্ন অংশ জুড়ে আছে সুইচগিয়ার। সুইচগিয়ার নিয়ে এই লেখাটিতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরা হবে।

সুইসগিয়ার অ্যান্ড প্রটেকশন-১ কিছু অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন-উত্তর
 সুইসগিয়ার অ্যান্ড প্রটেকশন-২ কিছু অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন-উত্তর দেখে নিন

সুইচগিয়ারঃ সুইচগিয়ার কোনো একক বস্তু নয়, এটি বৈদ্যুতিক সিস্টেমের স্বাভাবিক কার্যকলাপের সংযোগকারী, বিচ্ছিন্নকারী, রক্ষনাবেক্ষনকারী যন্ত্রপাতির সহ অবস্থানকে বুঝায়।
সুইচগিয়ার উপাদানগুলো হল-
  • সার্কিট ব্রেকার
  • রিলে
  • ইন্সট্রুমেন্ট ট্রান্সফরমার
  • বাসবার
  • কন্ডাকটর ইত্যাদি।

সুইচগিয়ার উপাদান

বাসবার 

বাসবার এক ধরনের তামা বা এলমুনিয়ামের পরিবাহী বা পাত বা মোটা রড যা এক বা একাধিক সার্কিট হতে বৈদ্যুতিক এনার্জি সংগ্রহ করে এবং এক বা একাধিক সার্কিটের মাধ্যমে উক্ত এনার্জি বিতরণ করে। 
বাসকাপলারঃ বাসকাপলার মূলত সার্কিট ব্রেকার ও আইসোলেটরের সমন্বয়। বাসকাপলারের চারপাশে ফায়ার ফ্রুপ দেয়াল থাকে।
বাসবার সেকশনালাইজডঃ বাসবারের কোনো অংশে ত্রুটি সংঘটিত হলে সমগ্র বাসবার সিস্টেমের কার্যক্রম যাতে বন্ধ হয়ে না যায় এবং এতে এতে বিভিন্ন সেকশনের সার্কিট ইনকামিং এবং আউটগোয়িং সার্কিটে সুষ্ঠ বন্টনে এ সিস্টেমের সর্বোচ্চ সাফল্য পাওয়া যায়।

ফিউজ

ফিউজ একটি স্বল্প দৈর্ঘ্য কারেন্ট ক্ষমতা অনুযায়ী সরু ও কম গলনাঙ্ক বিশিষ্ট পরিবাহী তার যা ইলেকট্রিক্যাল সার্কিটে সংযুক্ত থেকে নির্দিষ্ট পরিমানে কারেন্ট বহনে সক্ষম। নির্দিষ্ট পরিমানের চেয়ে অতিরিক্ত কারেন্ট প্রবাহিত হলে ফিউজ নিজে গলে গিয়ে সার্কিট কে রক্ষা করে।

ফিউজের প্রকারভেদ

ফিউজ সাধারণত দুই প্রকার:
  1. Low Voltage Fuse: Semi enclosed re-warble fuse (500A), HRC fuse (16000A – 30000A)]
  2. High Voltage Fuse: Cartridge fuse, Liquid type, Metal clad type, Expulsion fuse, Dropout fuse, horn-gap fus

সার্কিট ব্রেকার

সার্কিট ব্রেকার একটি নিয়ন্ত্রন ও রক্ষনাবেক্ষন যন্ত্র যা সার্কিটের অস্বাভাবিক অবস্থায় ত্রুটিপূর্ণ সার্কিটকে সরবরাহ হতে বিচ্ছিন্ন করে সার্কিটকে রক্ষা করে। কিন্তু বিচ্ছিন্ন করার পর এটি সার্কিটকে নিজে নিজে সংযোগ করতে পারেনা। কোনো ব্যক্তির হস্তক্ষেপ করার মাধ্যমে এটিকে পূনরায় কার্যক্ষম করা যায়।

সার্কিট ব্রেকারের কার্যপ্রণালী

সার্কিট ব্রেকারে দুইটি স্থির ও একটি চলনশীল কন্টাক্ট থাকে। চলনশীল কন্টাক্ট পরিচালনার জন্য সি.টি, রিলে ও ট্রিপ কয়েল সার্কিট থাকে।
স্বাভাবিক অবস্থায় লাইনে যে কারেন্ট প্রবাহিত হয় তার দ্বারা রিলে কয়েল এনার্জাইস্ট হয়না, এর ফলে ট্রিপ কয়েলও এনার্জাইস্ট হয়না।

সার্কিটে যখনই শর্ট সার্কিট কিংবা অন্য কোনো ফল্টের কারনে লাইনে অতরিক্ত কারেন্ট প্রবাহিত হয় তখন সি.টি তেও অতিরিক্ত কারেন্ট প্রবাহিত হয়, ফলে সি.টি. তে থাকা সংযুক্ত রিলে কয়েলও এনার্জাইস্ট হয় এবং লিংক ম্যাকানিজমকে আকর্ষন করে। ফলে লিংক ম্যাকানিজমের সাথে সংযুক্ত চলনশীল কন্টাক্ট সরে আসে। এভাবেই সার্কিট ব্রেকার ব্রেক হয়ে সার্কিটকে রক্ষা করে।

সার্কিট ব্রেকারের প্রকারভেদ

According to Voltage-
  1. Low voltage Circuit breaker (Below 1000V)
  2. High voltage Circuit breaker (Above 1000V)
According to Extinguishment
  1. Oil Circuit breaker. ( Bulb oil Circuit breaker, minimum oil Circuit breaker, self generated Circuit breaker, external generated Circuit breaker.
  2. Without oil Circuit breaker. ( water Circuit breaker, air blast Circuit breaker, sulfur hexafluoride Circuit breaker, vacuum Circuit breaker.

রিলে

রিলে এমন একটি স্বয়ংক্রিয় ডিভাইস যা যা বৈদ্যুতিক সার্কিটে পূর্ব নির্ধারিত কোনো বৈদ্যুতিক শর্তের পরিবর্তনে সাড়া দেয় এবং প্রতিরক্ষার জন্য সার্কিটে সংযুক্ত অন্যান্য ডিভাইস গুলোকে কাজ করতে সহযোগিতা করে।

বৈদ্যুতিক সিস্টেমে রিলে সার্কিট ব্রেকার ও সিটির মাঝামাঝি অবস্থান করে। যখনই সিস্টেমে কোনো প্রকার দোষ-ত্রুটি দেখা দেয় তখনই রিলে স্বয়ংক্রিয় ভাবে সজাগ হয়ে উঠে এবং সার্কিট ব্রেকারের ট্রিপ কয়েলকে এনার্জাইস্ট করে। ফলে সার্কিট ব্রেকার খুলে যায় এবং সিস্টেমকে বিপদের হাত থেকে রক্ষা করে। সিস্টেমের প্রতিটি ত্রুটির প্রতি সর্বদা সজাগ দৃষ্টি রাখতে হয় বলে একে নীরব প্রহরী কিংবা অতন্দ্র প্রহরী বলা হয়।

রিলের প্রকারভেদ:

According to timing specialty-
  1. Instantanious type relay.
  2. Time delay relay.
  3. Graded time protection type relay.
  4. Inverse time lag relay.
  5. Definite time lag relay.
  6. Inverse definite minimum time relay.
According to type of use-
  1. Over voltage, over current, over power relay.
  2. Under voltage, under current, under power relay.
  3. Over frequency and under frequency relay.
  4. Overload relay.
  5. Reverse power relay.
  6. Sensitive relay.
  7. Distance relay
  8. Instantaneous relay.
  9. Earthing relay.

বুখলজ রিলে

ট্রান্সফরমারের অভ্যন্তরীন ত্রুটি সনাক্ত করার জন্য বুখলজ রিলে ব্যবহার করা হয়। এটি মূলত ট্রান্সফরমারের মেইন ট্যাংক এবং কনজারভেটর ট্যাংকের মাঝামাঝি অবস্থানে স্থাপন করা হয়।

প্রাইমারী রিলে

যে সার্কিটকে প্রটেকশন দিতে হবে রিলে সে সার্কিটে সরাসরি সংযুক্ত থাকলে তাকে প্রাইমারী রিলে বলে।

সেকেন্ডারি রিলে

যদি সিটি এবং পিটি এর মাধ্যমে রিলে সার্কিটে সংযুক্ত থাকে তাহলে উক্ত রিলেকে সেকেন্ডারী রিলে বলে। সেকেন্ডারি রিলেকে ব্যাকআপ রিলেও বলে।

স্ট্যাটিক রিলে

আমেরিকান স্ট্যান্ডার্ড এসোসিয়েশন এর মতে যে রিলে এর মধ্যে কোনো আর্মেচার বা অন্যকোনো ঘুর্নায়মান উপাদান থাকেনা বরং যান্ত্রিক গতি বিহীন সলিড স্ট্যাট ম্যাগনেটিক বা অন্যকোনো উপাদান দিয়ে কাঙ্ক্ষিত উদ্দীপনা উৎপন্ন হয় তাকে স্ট্যাটিক রিলে বলে।

সুইচগিয়ার সিস্টেমের বৈশিষ্ট্য 

সুইচগিয়ার সিস্টেমের যে বৈশিষ্ট্য থাকা অত্যাবশ্যক তাহলো- সংবেদনশীলতা, বিশ্বস্ততা, উচ্চগতি, স্থায়িত্ব, সম্প্রসারণ সুবিধা ও সরলতা। এছাড়া সুইচগিয়ার এর নিম্মলিখিত বৈশিষ্ট্য থাকা অত্যাবশ্যক-
  • ত্রুটিজনিত অবস্থায় যেই পরিমান কারেন্ট প্রবাহিত হোকনা কেনো সেই ত্রুটিযুক্ত অংশকে অবশ্যই বিচ্ছিন্ন করতে হবে । কিন্তু স্বাভাবিক অবস্থায় নির্দিষ্ট লোড হতে সামান্য বেশি লোডের কারনে সিস্টেমে কোন সমস্যা হওয়া যাবেনা ।
  • বৈদ্যুতিক সিস্টেমকে নিরবিচ্ছিন্নভাবে সরবরাহ প্রদান করার জন্য কেবলমাত্র ত্রুতিযুক্ত অংশকে শনাক্ত করা এবং সেটি সরবরাহ হতে বিচ্ছিন্ন করারও ক্ষমতা থাকা লাগবে ।
  • বিভিন্ন যন্ত্রপাতির নিরাপত্তা, আয়ুকাল বৃদ্ধি এবং উত্তম সেবা প্রদান করার জন্য এটি উচ্চগতি সম্পন্ন হতে হয় । যত বেশি গতি হবে ত্রুটির কারনে ক্ষতি হবার প্রবনতা ততোই কম থাকবে ।
  • এটি অবশ্যই বিশ্বস্ত হতে হবে, নিশ্চিত করতে হবে যাতে এটি সঠিক সময়ে তার দায়িত্ব পালন করতে পারে।
  • সুইসগিয়ারের যন্ত্রপাতি সুমহ এমন হতে হয় যাতে ভবিষ্যৎ পরিবর্ধন বা পরিবর্তনে কোন প্রকার সমস্যার সৃষ্টি না করে ।
  • সুইসগিয়ার এবং প্রটেকটিভ ডিভাইসগুলোর অপারেশন এবং এর গঠন অবশ্যই সরল হতে হয় । যাতে নতুন কেউ খুব সহজেই এর অপারেশন বুঝতে পারে।

সুইচগিয়ার বৈদ্যুতিক ফল্ট বা ত্রুটি 

বৈদ্যুতিক ফল্ট এর কারন ও ফল্টের ধরনঃযখন দুই বা ততোদিক পরিবাহী স্বাভাবিক ভোল্টেজে কাজ করার সময় যদি একত্রে সংস্পর্শে আসে তখন ফল্ট সংঘটিত হয়েছে বলা হয়।
ইন্সুলেটর ফেইলারঃ লাইনের আকস্মিক ক্ষয়ক্ষতি, লাইটনিং চার্জ, ভোল্টেজ ড্রপ, আন-ব্যালান্স এবং স্টাবিলিটির পতনের ফলেই ইলেক্ট্রিক্যাল ফল্ট সংঘটিত হয়।
শর্ট সার্কিট ফল্ট মেইনলি ২প্রকার-
  1. সিমেট্রিক্যাল ফল্ট: বৈদ্যুতিক সিস্টেমে যে ফল্টের কারনে প্রতিটি ফেজে সমপরিমাণ ফল্ট কারেন্ট প্রবাহিত হয় সে ফল্টকে সিমেট্রিক্যাল ফল্ট বলে। সিমেট্রিক্যাল ফল্টের মাধ্যমে সার্কিট ব্রেকারের রেটিং নির্ধারণ করা হয়। সিমেট্রিক্যাল ফল্ট গুলো হলো- তিন ফেজ একত্রে শর্ট সার্কিট, তিন ফেজ একত্রে আর্থের সাথে শর্ট সার্কিট।
  2. আনসিমেট্রিক্যাল ফল্ট: বৈদ্যুতিক সিস্টেমে যে ফল্টের কারনে প্রতিটি ফেজে অসম ফল্ট কারেন্ট প্রবাহিত হয় সে ফল্টকে আনসিমেট্রিক্যাল ফল্ট বলে। আনসিমেট্রিক্যাল ফল্টের মাধ্যমে রিলে সেট করা হয়। আনসিমেট্রিক্যাল ফল্ট গুলো হলো- সিংগেল লাইন টু গ্রাউন্ড ফল্ট, লাইন টু লাইন ফল্ট, ডাবল লাইন টু গ্রাউন্ড ফল্ট, দুই ফেজ একত্রে শর্ট সার্কিট এবং তৃতীয় ফেজ আর্থের সাথে শর্ট সার্কিট।

শর্ট সার্কিট কারেন্ট নির্নয়ের পদ্ধতি তিনটি

  1. Ohmic system
  2. Per unit system
  3. Percentage reactant system

কারেন্ট লিমিটিং রিয়েক্টর

কারেন্ট লিমিটিং রিয়েক্টর মূলত একটি ইন্ডাক্টিভ কয়েল, যা প্রয়োজনের সময় ইন্ডাক্টিভ রিয়েক্ট্যান্স প্রদান করে শর্ট সার্কিট কারেন্টকে সীমিত করে রাখে।
গঠনের উপর ভিত্তি করে এর প্রকার হচ্ছে- ড্রাই টাইপ এয়ার কোরড রিয়েক্টর, আয়রন কোর রিয়েক্টর, ওয়েল ইমার্জড এয়ার কোরড রিয়েক্টর।
অবস্থানের উপর ভিত্তি করে এর প্রকার হচ্ছে- জেনারেটর রিয়েক্টর, ফিডার রিয়েক্টর, বাসবার রিয়েক্টর।
 আরও জানুন
অল্টারনেটরের ত্রুটি সমূহ
  1. স্টেটর ওয়াইন্ডিং ফল্ট।
  2. স্টেটর ইন্টার টার্ন ফল্ট।
  3. রোটর ফল্ট।
  4. ফিল্ড সার্কিট অচল হয়ে যাওয়া।
  5. আনব্যালেন্স লোড।
  6. ওভার লোডিং।
  7. ওভার স্পীড।
অল্টারনেটরের ত্রুটি নিরূপনে ব্যবহৃত প্রটেকশন সিস্টেম গুলো হলো-
  1. ডিফারেন্সিয়াল অথবা মার্জ প্রাইস প্রটেকশন।
  2. আর্থ ফল্ট প্রটেকশন।
  3. স্টেটর ইন্টার টার্ন প্রটেকশন।

ট্রান্সফরমারের ত্রুটি সমূহ হলো

  1. ওপেন সার্কিট ফল্ট।
  2. ওভার হিটিং ফল্ট।
  3. ওয়াইন্ডিং শর্ট সার্কিট ফল্ট। ( আর্থ ফল্ট, ফেজ টু ফেজ ফল্ট, ইন্টার টার্ন ফল্ট)
ট্রান্সফরমারের ত্রুটি নিরূপনে ব্যবহৃত প্রটেকশন সিস্টেম গুলো হলো-
  1. বুখলজ রিলে।
  2. আর্থ ফল্ট রিলে।
  3. ওভার কারেন্ট রিলে।
  4. ডিফারেন্সিয়াল বা মার্জ প্রাইস সিস্টেম।
ওভার ভোল্টেজের কারন গুলো হলো-
পাওয়ার সিস্টেমে ট্রান্সমিশন লাইনে ওভার ভোল্টেজ প্রধানত দুই কারনে হয়-
  1. অভ্যন্তরীণ কারন। (ক. সুইচিং সার্জ, খ. ইন্সুলেশন ফেইলার, গ. আর্কিং গ্রাউন্ড, ঘ. রেজোনেন্স
  2. অনাভ্যন্তরীন কারন। (ক. ডাইরেক্ট স্ট্রোক, খ. ইন্ডাইরেক্ট স্ট্রোক।


EmoticonEmoticon