স্মার্ট হতে চান ? জেনে নিন স্মার্ট হওয়ার জন্য ১০টি সহজ উপায়

স্মার্টনেস কি?  

স্মার্টনেস হল বুদ্ধিমত্তা এবং শরীরি ভাষার সমন্বয়ে অন্যদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার ক্ষমতা । স্মার্ট মানুষ যেকোন পরিস্থিতিতে খুব সহজেই অন্য মানুষদের মাঝে নিজের কথা বা আইডিয়াকে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে পারে । মুখের ভাষায় বললে আমরা যাকে বলি, পটিয়ে ফেলা বা কনভেন্সড করার ক্ষমতা ।

স্মার্ট মানুষদের মধ্যে সব থেকে বড় গুণ হচ্ছে, যেকোন বিষয় সম্পর্কে তাদের সাধারণ ধারণা থাকে, যা অন্যদের চোখে তাকে তুখোড় বুদ্ধিমান বলে মনে করায় । 

এবার আসি স্মার্টনেস কেন প্রয়োজন?
আপনি প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠার পর থেকে শুরু করে রাতে পুনরায় বিছানায় যাওয়ার আগে পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টা সময়ের সার্কেলে কত শত মানুষের সাথে উঠাবসা করছেন, একবার ভেবে দেখেছেন? আপনাকে প্রতিদিন প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে শত শত মানুষের সাথে চলতে হচ্ছে, বিনিময় করতে হচ্ছে, কাজ করতে হচ্ছে । ফলে স্বাভাবিকভাবেই কাজের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময়ে মানুষকে সামলানোর জন্য দক্ষতার প্রয়োজন হয়ে পড়ে । আপনি যত বেশি মানুষকে কনভেন্স করতে পারবেন, ততই কাজের গতি আপনার স্মুথ হবে । আপনি সহজেই সাফল্যের দেখা পাবেন ।


‘গায়ের জোরে নয়, কাজ করুন বুদ্ধি দিয়ে’
আগেই বলেছি, স্মার্টনেস হল বুদ্ধিমত্তা ও প্রকাশভঙ্গী দুইয়ের সমন্বয় । এই পর্বে আমরা বলবো বুদ্ধিমত্তা নিয়ে । আগামী পর্বে থাকবে, কীভাবে অন্যের চোখে আপনাকে সুদর্শন হিসেবে উপস্থাপন করবেন করবেন । 


জীবনের প্রকৃত অর্থ হচ্ছে কোন কিছু শেখা । আমরা সবাই জানতে চাই, জ্ঞানী হতে চাই । স্মার্ট হওয়াটা খুব সহজ ব্যাপার নয় যে, আপনি চাইলেন আর সাথে সাথে হয়ে গেলেন । আসলে স্মার্টনেস অর্জন করাটা বলতে গেলে একটু কঠিনই । আপনিও স্মার্ট হতে পারেন যদি এর জন্য অনেক বেশি চেষ্টা থাকে আপনার । এখানে এমন ১০ টি শেখার অভ্যাসের কথা বলবো যেগুলো খুব দ্রুত আপনাকে স্মার্ট করে তুলবে ।
ক্যারিয়ার জন্য যে কাজগুলো গ্রাজুয়েশনের আগেই করা দরকার জেনে নিন

১. কোন কিছু জানতে উৎসাহী থাকুন

সব সময় উৎসুক থাকুন । একজন উৎসাহী মানুষ যেকোন কিছু খুব সহজেই শিখে ফেলতে পারে । এমন একটি দারুণ গুনকে নিজের ভেতর ধারন করার চেষ্টা করুন । আপনি যখনই এই চর্চাটা শুরু করে দেবেন, কিছুদিন বাদে নিজেই টের পাবেন যে, আপনার মস্তিষ্ক আগের চেয়েও দারুণ সক্রিয়ভাবে কাজ করছে, আর আপনি প্রতিদিনই নিজেকে অনেক বেশি স্মার্ট করে তুলছেন ।

২. নতুন কিছু শিখতে সব সময় প্রস্তুত থাকুন

শেখার ক্ষেত্রে কোথাও না শব্দটি বলবেন না । আপনি নিজেও জানেন না আজকে যেটা শিখছেন সেটা কখন কীভাবে কোন পরিস্থিতিতে আপনার জীবনের খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি সময়ে এসে কাজে লেগে যাচ্ছে । তাই বলছি, সবসময় নতুন কিছু শেখার জন্য প্রস্তুত থাকুন আর সুযোগ পেলেই শিখে ফেলুন । এর ফলাফল হয়ত আপনি সাথে সাথেই পেয়ে যেতে পারেন অথবা ভবিষ্যতে যে কোন পর্যায়ে এটা আপনাকে অনেক বেশি সাহায্য করবে ।

৩. প্রতিদিন সংবাদপত্র পড়ুন

সারা পৃথিবীর কোথায় কি ঘটছে তার সম্পর্কে প্রচুর তথ্য জানতে পারবেন নিয়মিত সংবাদপত্র পড়ার অভ্যাস তৈরি করার মাধ্যমে । যা আপনাকে তথ্যগত দিক থেকে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে রাখবে । আপনি যখন এতকিছু নিয়ে জানবেন, তখন আপনি অকল্পনিয়ভাবেই নিজে নিজে স্মার্ট হয়ে উঠছেন ।


৪. ভাল ভাল বই পড়ুন

বই পড়া আপনার সৃজনশীলতাকে প্রখর করে তুলবে, আর আপনার ভেতরের সংকীর্ণ চিন্তা ও সীমাবদ্ধতাকে দূর করে দেবে । তাই বেশি বেশি বই পড়ার অভ্যাস তৈরি করুন । চেষ্টা করুন ভাল ভাল বই টানা শেষ করে যেতে । এটা আপনাকে শুধু স্মার্টই করবে না, আপনার জীবনে নানা ভাবে অবদান রাখতে পারে, আপনার বই পড়ার অভ্যাস ।

৫. নতুন নতুন আইডিয়া বের করুন

একটি ব্যাপারে সবাই একমত যে, নতুন নতুন আইডিয়া যেসব মানুষ তৈরি করতে পারে তারা তুলনামুলকভাবে অন্যদের চেয়ে বেশি স্মার্ট হয় । স্মার্ট হতে হলে শেখার জন্য আপনার মনের দরজা সব সময় খোলা রাখতে হবে, চারপাশ থেকে গ্রহণ করুন, শিখুন- যেটা আপনাকে স্মার্ট করে তুলবে । 

৬. স্মার্ট লোকজনদের সাথে চলুন

স্মার্ট মানুষজনের সাথে মিশুন, আড্ডা দিন । তাদের কাছে অনেক কিছু শিখতে পারবেন আপনি । নতুন নতুন আইডিয়াসহ আপনি অনেক অজানা বিষয়ে জানতে ও শিখতে পারবেন তাদের কাছে । তাই স্মার্ট লোকজনদের সাথে এখন থেকেই খাতির জমানোর চেষ্টা শুরু করে দিন, যেটা আপনার স্মার্ট হওয়ার পক্ষে খুব কাজে দেবে । 

৭. মনকে উজ্জবিত রাখুন

আপনি যদি ধারাবাহিকভাবে নিজের মনকে উজ্জিবিত রেখে যেতে পারেন, তাহলে আপনার মন সক্রিয় থাকবে এবং আগের চেয়ে অনেক ভাল অবস্থায় কাজ করবে । মনকে সতেজ রাখুন, দেখুন কি দারুনভাবেই না আপনার কাজ এগিয়ে যাচ্ছে । আপনি নিজেই বুঝবেন কি ম্যাজিকের মতো দিনে দিনে অনেক বেশি স্মার্ট হয়ে উঠছেন আপনি । 

৮.আইডিয়াগুলোকে সব সময় লিখে রাখুন

আপনার মাথায় যে আইডিয়াই আসুক না কেন, সেটা তাৎক্ষণিকভাবে লিখে রাখুন । সব সময় সাথে একটি ছোট নোটবই রাখতে পারেন । তবে আজকাল স্মার্ট ফোনে দারুণ কিছু এপস আছে । গুগল প্লে স্টোর থেকে আপনার স্মার্ট ফোনে এমন একটি এপস ডাউনলোড করে নিতে পারেন । মাঝে মাঝে নোটে লিখে রাখা আইডিয়াগুলো পড়বেন । এর ফলে আপনি জানতে পারবেন কোথায় আপনার শক্তি আর কোথায় কোথায় দুর্বলতা । আপনার দুর্বলতা এবং শক্তির জায়গা বুঝে শুনে পরিকল্পনা করাটা আপনার জন্য অনেক সহজ হয়ে যাবে । 

সফল ক্যারিয়ার ও উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়তে শিক্ষার্থীদের জন্য ক্যারিয়ার টিপস

৯. যা জানেন তা অন্যদের সাথে শেয়ার করুন

আপনি যা শিখেছেন, আপনি যেটা জানেন সেটা অন্যদের সাথে শেয়ার করুন । এর ফলে আপনি আপনার আইডিয়া সম্পর্কে তাদের মতামত, তাদের দৃষ্টিভঙ্গি জানতে পারবেন । একই সাথে অন্যদের সাথে শেয়ার করার মাধ্যমে আপনার আইডিয়ার একেবারে স্বচ্ছ একটি ছবি আপনা আপনি তৈরি হয়ে যাবে আপনার মস্তিষ্কে । যেটা আপনার আইডিয়াকে আগের চেয়েও সুক্ষ ও পরিপূর্ণ করে তুলবে । তাই কখনো নিজের আইডিয়া অন্যদের সাথে শেয়ার করতে ভয় পাবেন না । 

১০. অনুপ্রেরণামূলক ভিডিও দেখুন

আমরা নিজেরাই অনেক সময় জানিনা কতটা প্রতিভা আমাদের মধ্যে লুকিয়ে আছে । নিজেকে আবিস্কার করাটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ । জেনে রাখুন, আপনাকে দিয়ে সব কিছু খুব ভাল মতো করানো সম্ভব নয়, তবে আপনি এমন কিছু করতে পারেন যেটা সত্যি আপনি ছাড়া অন্য কেউ তেমনভাবে পারবে না । অর্থাৎ এই কাজটাই আপনার প্রকৃত শক্তির জায়গা । স্টিফেন হকিং যদি নিজেকে একজন কুস্তীগির হিসেবে তৈরি করতে চাইতো, সেটা বলা যায় একেবারেই একটা ব্যর্থ প্রচেষ্টা হত, আবার জন সিনা যদি বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং হওয়ার চেষ্টা করত, তাহলে আমরা তার মতো একজন বিশ্বসেরা রেসলারকে কখনোই পেতাম না । তাই কার ভেতরে কি লুকিয়ে আছে সেটা খুঁজে বের করাটাই সব থেকে কঠিন কাজ ।

আবার ধরা যাক, আপনি আপনার শক্তির জায়গাটা খুঁজে পেয়েছেন, দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ হবে টিকে থাকাটা । আপনি যে আসলেই এই কাজটি ভাল পারেন, কাজটি যে আপনাকে অন্যদের চেয়ে সেরা বানাবে এই বিশ্বাসটা তৈরি করা ।

নিজেকে আবিস্কার করাটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ । আপনি কোন কাজটা ভালো পারেন, একই সাথে সেই কাজটা করতে আনন্দ পান এমন কাজটি খুঁজে বের করুন ।
দুঃখজনক হলেও সত্যি আমাদের চারপাশের বেশিরভাগ মানুষ আপনাকে আপনার বিশ্বাস থেকে একটু একটু করে দূরে সরিয়ে নিতে চাইবে । আপনাকে নিরুৎসাহিত করবে ।


তবে পাশাপাশি এমন কিছু মানুষ আছে- যার ছোট একটু অনুপ্রেরণার কথা আপনাকে দিতে পারে নতুন এক আত্মবিশ্বাস । আপনি একটু খেয়াল করলেই দেখতে পাবেন আপনার জীবনে ছোট বড় যা কিছু অর্জন আছে তার পেছনে ছায়ার মতো করে আড়ালে লুকিয়ে আছে কিছু মানুষের অনুপ্রেরণা ।

যদি একান্তই ভাবেন আপনার পাশে এমন কোন মানুষ নেই, যে আপনাকে উৎসাহ দিতে পারে, যে আপনাকে বুঝতে পারে, তাহলে আপনার জন্য সবচেয়ে বড় মাধ্যম হতে পারে- অনুপ্রেরণামূলক ভিডিও দেখা । আজকাল অনলাইনে প্রচুর ভিডিও আছে যেখান থেকে আপনি নিজেকে নতুন ভাবে, নতুন দৃষ্টিকোণে দেখার সুযোগ পাবেন । এই ধরণের ভিডিওর জন্য সেরা প্রতিষ্ঠান হচ্ছে “TED talks”. “Smarter Every Day” হচ্ছে আরও একটি চমৎকার ওয়েবসাইট । এসব ওয়েবসাইটে এমন পরীক্ষিতভাবে ভিডিওগুলো তৈরি করা হয়, যেন সারাজীবন বিষয়গুলো আপনার মাথায় থাকে ।

ধন্যবাদ এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য । আপনার আশে পাশে যদি এমন কোন মানুষ থাকে যার এই লেখাটি পড়া উচিত বলে মনে করেন , তার সাথে অবশ্যইলেখাটি শেয়ার করবেন । ভালো থাকুন ।

সফলতা কেবল আপনার জন্যই ।  


EmoticonEmoticon