বিটকয়েন কি? | কীভাবে বিটকয়েন থেকে উপার্জন করা যায় | কীভাবে খরচ করতে হয়। বিস্তরিত


বন্ধুরা, আমি যদি এমন কোন মুদ্রার কথা বলি—যা আপনি কখনো ছুঁতে পারবেন না, আপনার মানিব্যাগেও থাকবে না, কিন্তু আপনি খরচ করতে পারবেন এবং উপার্জনও করতে পারবেন। হ্যাঁ, বন্ধুরা আমি বিটকয়েনের কথায় বলছি। বিটকয়েন হলো এমন এক ধরনের মুদ্রা যা শুনতে তো কয়েন—কিন্তু এর কোন ব্যস্তব অস্তিত্ব থাকে না। এটি ইলেক্ট্রোনিক্যালি আপনার ফোন, ট্যাবলেট, ল্যাপটপ বা যেকোনো স্টোরেজ মিডিয়াতে সেভ থাকে। শুধু এই এক লাইনেই সবকিছু শেষ নয়। এই মুদ্রার সম্পর্কে আপনার জানা প্রয়োজন আরো কিছু বিশেষ তথ্য। চলুন সবকিছু জেনে নেওয়া যাক।

বিটকয়েন

ব্যস্তবিকভাবে দেখতে গেলে একটি সাধারন কাগজ আর কোন নোটের মধ্যে কোন পার্থক্য থাকে না। কিন্তু একটি নোটের মূল্য ২ টাকা থেকে শুরু করে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে—কেনোনা এর পেছনে সরকার থাকে, ব্যাংক থাকে, এবং কোন অথোরিটি থাকে। তারা একসাথে বসে এটি সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে যে, কোন নোটের মূল্য কত হবে। আর আমরা তাদের বিশ্বাস করি এবং এই সামান্য কাগজের টুকরাটাকে মূল্যবান বানিয়ে দেয়।
কিন্তু বিটকয়েনের ক্ষেত্রে এই মামলাটা সম্পূর্ণই আলাদা। কেনোনা বিটকয়েনের মান না তো কোন সরকার নির্ধারণ করে দেয়, আর নাই বা কোন ব্যাংক। বিটকয়েন নিয়ন্ত্রন করার জন্য কোন নির্দিষ্ট অথোরিটিও থাকে না। ২০০৯ সালে এই মুদ্রা সর্বপ্রথম চালু করা হয়েছিলো, এবং এটি তখন থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত চলে আসছে, যা অনলাইনে অনেক বেশি জনপ্রিয়।
বিটকয়েন
বর্তমানে ১ বিটকয়েন সমান ৫৭৯ ডলার। কয়েক বছর আগে এর মূল্য ১,২০০ ডলার পর্যন্ত চলে গিয়েছিল। কিন্তু যেহেতু এর মূল্য নির্ধারণ করার জন্য কোন অথোরিটি নেই, কোন সরকার নেই এবং কোন ব্যাংক নেই, তাই এর মূল্য উঠানামা করতে থাকে (যদি এখন বিটকয়েনের মূল্য স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে)। আপনার এবং আমার এই মুদ্রার উপর ভরসা আছে বলেই আমরা একে অপরের সাথে এটিকে বিনিময় করতে পারি। এতে সুবিধা হলো আমি যদি আপনাকে কিছু বিটকয়েন পাঠাতে চাই, তবে আমি আপনাকে তা সরাসরি পাঠিয়ে দিতে পারবো। এমনটা নয় যে, আমাকে কোন ব্যাংকে যেতে হবে আর না হলে কোন অথোরিটির মাধ্যমে আপনাকে পাঠাতে হবে। আপনার অ্যাকাউন্ট কখনো ফ্রিজ করা সম্ভব নয় এবং আপনি যখন ইচ্ছা যাকে তখন ইচ্ছা তাকে এই মুদ্রাটি পাঠাতে পারবেন। এতে আপনি যতো সুবিধা পেতে পারেন, ততো সুবিধা সাধারনত কোন ব্যাংক বা সাধারন মুদ্রা আপনাকে দিতে পারবেনা। ব্যাংক ট্রানজেকশনে অনেক বেশি রুল থাকে, যা আপনাকে অবশ্যই অনুসরন করতে হয়, কিন্তু বিটকয়েনের ক্ষেত্রে কোন রুল থাকে না।

বিটকয়েন উপার্জন

বিটকয়েন উপার্জন

বিটকয়েন কতিপয় উপায়ে কামানো এবং খরচ করা সম্ভব। এটি উপার্জন করার সবচাইতে সহজ উপায় হলো, সরাসরি কিছু বিটকয়েন কিনে ফেলতে পারেন। এখন মনে করুন ১ বিটকয়েনের মূল্য ৫৭৯ ডলার, আপনি ৫৭৯ ডলারের বিনিময়ে সরাসরি এই মুদ্রা কিনে ফেলতে পারেন এবং এটি অনলাইনে আপনার অ্যাকাউন্টে ইলেক্ট্রোনিক্যালি জমা হয়ে যাবে। আবার এই মুদ্রা কামানোর জন্য আপনি কোন সার্ভিস বা জিনিসও বিক্রি করতে পারেন। এখন মনে করুন আমার কাছে একটি ফোন আছে, যার মূল্য ৫৭৯ ডলার। তো আমি এই ফোনটি অনলাইনে ১ বিটকয়েনের মূল্যে বিক্রি করে দিতে পারি, এতে আমার কাছে এই মুদ্রা চলে আসবে।
এছাড়া আপনি চাইলে বিটকয়েন মাইন করতে পারেন, আর এটিই হলো এই মাধ্যম যার ফলে নতুন বিটকয়েনগুলো বাজারে চলে আসে। বন্ধুরা দেখুন সাধারন কোন নোট সরকার বা অথোরিটি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। এর মূল্য এবং সকল প্রকারের আদান প্রদান তারা নিয়ন্ত্রন করে থাকেন। যদি কখনো কোন নোটের প্রয়োজন পড়ে তো তারা ইচ্ছা মতো নোট ছাপাতে পারেন এবং এভাবে নতুন নোট বাজারে চলে আসে। কিন্তু বিটকয়েন প্রিন্ট করা হয়না, এবং এর নিয়ন্ত্রণকারী হিসেবে কেউ থাকে না, তবে এর একটি মূল্য রয়েছে যার ফলে শুধু নির্দিষ্ট সংখ্যক (৩১ মিলিয়ন) বিটকয়েনই বাজারে থাকতে পারে। কেনোনা এই মুদ্রা অনেকবেশি বেড়ে গেলে এর মূল্য কমে যাবে, তাই এটি নিয়ন্ত্রন করার জন্য এই সিস্টেম তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু এমন একসময় আসবে যখন নতুন কোন বিটকয়েন আর মার্কেটে আসবে না।

বিটকয়েন আদান প্রদান

apple-490485_1280
এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই মুদ্রা আদান প্রদান করা যায় কীভাবে? দেখুন সবচাইতে বড় ধরনের সমস্যা কিন্তু এখানেই ঘটে। আর এই বিষয়টি বোঝানোও একটু মুশকিলের কাজ। চলুন সহজ করে বিষয়টি বোঝার চেষ্টা করা যাক।
মনেকরুন আপনি কোন পার্কে গেলেন সকালে হাটার জন্য। তো সেখানে গিয়ে দেখছেন একটি অ্যাপেল ওয়ালা অ্যাপেল বিক্রি করার জন্য বসে আছে এবং আপনি একটি অ্যাপেল কিনতে চান। এখন আপনি ওনাকে টাকা দিয়ে দিলেন আর বিনিময়ে একটি অ্যাপেল কিনে ফেললেন। এখন আপনার হাতে অ্যাপেলটি আসলো কিনা তা নিয়ে কিন্তু আপনাকে চিন্তা করতে হবে না। কেনোনা আপনি অ্যাপেলটি ফিজিক্যালি দেখতে পাচ্ছেন এবং হাত দিয়ে ছুঁতে পারছেন। তাই আপনাকে অন্য কোন ব্যাক্তির প্রয়োজন পড়বে না এটি চেক করানোর জন্য। এই অ্যাপেলটি সম্পূর্ণ আপনার হয়ে যাবে এবং আপনি চাইলে তা যে কাওকে দিয়েও দিতে পারেন। আপনি এই অ্যাপেলটি আপনার বন্ধুকে দিতে পারেন ,আপনার বন্ধু সেটি আরেকজনকে দিতে পারে আর এভাবেই এই ক্রম বজায় থাকতে পারে।
কিন্তু বন্ধুরা এখন চিন্তা করে দেখুন একটি ডিজিটাল অ্যাপেলের কথা—যেটি আপনার পকেটে নয়, বরং জমা হয়ে আছে আপনার কম্পিউটার বা যেকোনো কম্পিউটিং ডিভাইজে। আপনি কেমন করে বুঝবেন যে, এই অ্যাপেলটি আপনার? কেমন করে নিশ্চিত হবেন এটি আপনার বন্ধুকে পাঠিয়ে দেন নি? মজা শুরু হয়ে গেছে না? যেহেতু এটি ডিজিটাল ফরম্যাটে আছে তাই একে হাজারো কপি বানানো সম্ভব। কাওকে মেইল করে পাঠিয়ে দেওয়া সম্ভব। আবার ইন্টারনেটে রেখে দিলে তা মিলিয়নবার ডাউনলোড করাও সম্ভব।
তাহলে বুঝলেন তো, ফিজিক্যাল অ্যাপেল আর ডিজিটাল অ্যাপেল বিনিময় করা কিন্তু এক বিষয় নয়। বিটকয়েন বিনিময় করার সময়ও কম্পিউটার বিজ্ঞানীরা একই সমস্যাই পড়ে থাকেন, আর সমস্যাকে “double-spending problem” বলা হয়ে থাকে।
এখন আপনি যদি কাওকে কোন নোট বা কিছু টাকা পাঠাতে চান তবে সেই নোটটি হলো কোন ফিজিক্যাল মুদ্রা, যা একবার কাওকে দিয়ে দিলে আর আপনার কাছে থাকবে না। অথবা আপনি যদি ব্যাংকের মাধ্যমে কাওকে টাকা পাঠাতে চান, তবে আপনাকে কিছু ফী দিতে হবে কিছু কাগজপত্র স্বাক্ষর করতে হবে। এতে আপনার অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কেটে আরেকজনের অ্যাকাউন্টে টাকা যুক্ত করা হবে এবং সেই টাকা পরে একটি প্রপার চ্যানেলের মাধ্যমে সেই ব্যক্তিটির কাছে ফিজিক্যালি পৌঁছে যাবে। এখানে আপনাকে অবশ্যই ভেরিফাই করা হবে যে, আপনার অ্যাকাউন্টে টাকা আছে কিনা এবং আপনি কোন একটি নোটকে শুধু একবারই খরচ বা কাওকে দিয়ে দিতে পারবেন।
কিন্তু বিটকয়েন পাঠানোর সময় ব্যাপারটা একটু আলাদা। আমি যদি আপনাকে কিছু মুদ্রা পাঠাতে চাই তবে হয়তো আমি আমার ডিভাইজ থেকে সেটি আপনার অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দিলাম। কিন্তু এই ট্রানজেকশন কে ভেরিফাই করে দেবে? মানে আমি যে আপনাকে কিছু মুদ্রা পাঠালাম, আবার সেটা যে আমার কাছে এখনো জমা নেই তার কি নিশ্চয়তা?
এই সকল গণ্ডগোল ঠিক করার জন্য প্রত্যেকটি বিটকয়েনের অংশের সাথে গাণিতিক সমস্যা জুড়ে দেওয়া হয় এবং প্রত্যেকটি কয়েনের সাথে একটি গাণিতিক নাম্বার লাগিয়ে দেওয়া হয় একে ট্র্যাক করার জন্য। এভাবে বোঝা যায় যে কোন নাম্বারের কয়েন কখন কার কাছ থেকে কোথাই গেলো। এখন গোটা দুনিয়া জুড়ে প্রতিদিন অগুনতি কয়েন আদান প্রদান করা হয়ে থাকে তো এই ট্রানজেকশন গুলো সফল কে করিয়ে থাকে?
বিটকয়েনের এই বিশাল গাণিতিক সমস্যার সমাধান করে যারা এই ট্রানজেকশন গুলো সফল করিয়ে দেয়, তাদের বিটকয়েন মাইনারস বলা হয়ে থাকে। এদের কাছে অনেক শক্তিশালী কম্পিউটার থাকে। এই কম্পিউটার গুলোতে অনেক পাওয়ারফুল জিপিইউ লাগানো থাকে, আর তারা যদি এই ঝামেলার গাণিতিক সমস্যা সমাধান করে সবার আগে ট্রানজেকশন করিয়ে দেয় তাহলে আপনার আর আমার ট্রানজেকশন তো হয়ে যাবে এবং এই কাজ করিয়ে দেওয়ার জন্য মাইনারস রাও কিছু বিটকয়েন পুরস্কার স্বরূপ অর্জন করতে পারবে।

বিটকয়েনের অসুবিধা

বিটকয়েনের অসুবিধা
সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো বিটকয়েন কোন স্থিতিশীল মূল্যের মুদ্রা নয়—কেনোনা এটি নিয়ন্ত্রন করার জন্য কোন অথোরিটি থাকেনা। তাই এর মূল্য অনেক বেশি উঠানামা করতে পারে। একটি ১০০ টাকার নোট যেমন সময় ১০০ টাকাই থাকে কিন্তু ১ বিটকয়েনের মান সর্বদা এক থাকে না। তাই হতে পারে অনেক সময় আপনাকে অনেক লস স্বীকার করতে হতে পারে।
আপনি চাইলে বিটকয়েন থেকে যেকোনো পরিমানের অংশ খরচ করতে পারেন, এমন নয় যে আপনাকে ১ বিটকয়েনই খরচ করতে হবে। আপনি চাইলে ০.০০০১ বিটকয়েনও খরচ করতে পারেন। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এটি অনেক জায়গায় গ্রহন যোগ্য নয়। আপনি অনেক ওয়েবসাইটে একে ব্যবহার করতে পারবেন না। সব বিক্রেতা এটি গ্রহন করে থাকেন না। এতে আপনি ইচ্ছা মতো খরচ করতে পারবেন না। এর মানে অনেক জায়গায় আপনার কাছে বিটকয়েন থেকেও কিছু না থাকার বরাবর। সত্যি কথা বলতে এটি সতিই এক ধরনের ঝুঁকি, ফলে আপনি দ্বিধাই পড়ে যেতে পারেন যে, আপনার বিটকয়েনের উপর ইনভেস্ট করা ঠিক হবে কিনা।
যেহেতু এই মুদ্রা শুধু মাত্র ইলেক্ট্রোনিক্যালি জমা থাকে, তাই আপনার কম্পিউটার বা কম্পিউটিং ডিভাইজ যদি ক্র্যাশ হয়ে যায় কিংবা আপনি যদি অ্যাকাউন্ট পাসওয়ার্ড ভুলে যান তবে, আপনার সকল কয়েন গায়েব হয়ে যাবে। এবং আপনি কখনোই এই কয়েন গুলো রিকভার করতে পারবেন না।

বিটকয়েনের সুবিধা

অসুবিধার পাশাপাশি এতে অনেক সুবিধাও রয়েছে। আপনি যখন যেভাবে ইচ্ছা যে কাওকে যেকোনো পরিমানের বিটকয়েন পাঠাতে পারবেন, এতে কোন রুল অনুসরন করার প্রয়োজন পড়বেনা। তাছাড়া সকল কয়েন গাণিতিক সমস্যার সাথে জুড়ে থাকে, ফলে প্রত্যেকটি ট্রানজেকশন করার সময় হিসেব থাকে, আপনি কোথাই কখন কতো কয়েন সেন্ড করলেন বা রিসিভ করলেন। আপনার কয়েন কেউ কখনোই খরচ করতে পারবে না এবং আপনিও কারো কয়েন খরচ করতে পারবেন না।
যার বিটকয়েন নেই সেও কোন কয়েন খরচ করতে পারবে না। এবং এগুলো একটি প্রপার সিস্টেম দ্বারা মানে কম্পিউটার সিস্টেম দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হওয়ার জন্য কখনোই কেউ একাধিকবার একই বিটকয়েন খরচ করতে পারবে না।

আপনি চাইলে বিটকয়েন মাইন করেও বিটকয়েন অর্জন করতে পারেন, কিন্তু এতে প্রয়োজন পড়বে অনেক শক্তিশালী কম্পিউটার সেটআপ। আশা করছি আজকের পোস্টটি অনেক চমৎকার ছিল এবং নানান অজানা তথ্যে সমৃদ্ধ ছিল। আশা করি সবাই পোস্টটি শেয়ার করবেন ।


tag: বিটকয়েন আয় করুন, বিটকয়েন সাইট, কিভাবে বিটকয়েন আয় করা যায়, বিটকয়েন হিসাব, বিটকয়েন আয় 2017, বিটকয়েন হ্যাক, বিটকয়েন আয় 2018, বিটকয়েন থেকে আয়


EmoticonEmoticon