কম্পিউটারে এসএসডি (SSD) লাগানোর পূর্বে যে তথ্য গুলো জানা আপনার প্রয়োজনীয়!

Tags

এসএসডি বা সলিড স্টেট ড্রাইভ হচ্ছে কম্পিউটার সিস্টেমের জন্য নতুন হাই পারফর্মেন্স স্টোরেজ সলিউশন। এসএসডি সাধারণ হার্ড ড্রাইভ থেকে অনেক বেশি রীড, রাইট স্পীড প্রদান করে থাকে এবং সাথে এটি অনেক কম পাওয়ার কনজিউম করে কাজ করতে পারে, আর এতে কোন মুভিং পার্ট নেই। যাই হোক, এসএসডি লাগানোর মাধ্যমে আপনার কম্পিউটারের কাজ করার স্পীড কয়েক গুনে বাড়ানো সম্ভব, যেটা সহজেই আপনার চোখে পড়তে পারে। কিন্তু এসএসডি কেনার পূর্বে কিছু টার্ম সম্পর্কে খুব ভালো জ্ঞান থাকা প্রয়োজনীয়! এই টিউনে আমি এসএসডির কিছু ফিচার, পারফর্মেন্স, এবং কমতি নিয়ে আলোচনা করবো, যেগুলো কম্পিউটারে এসএসডি লাগানোর পূর্বে আপনার অত্যন্তবেশি জানা প্রয়োজনীয়!

ইন্টারফেস

এসএসডি আপনার সিস্টেমে লাগাবেন খুব ভালো কথা, কিন্তু আপনার সিস্টেমের কিছু ক্ষমতাও থাকতে হবে, যাতে সে এসএসডিকে ঠিকঠাক মতো হ্যান্ডেল করতে পারে। বেশিরভাগ এসএসডি স্যাটা (SATA) ইন্টারফেসের হয়ে থাকে, যদি আপনার স্যাটা পুরাতন জেনারেশনের হয়, তারপরেও সেটি অনেক পাওয়ারফুল কিন্তু সম্ভবত এটি এসএসডি থেকে এর ফুল পারফর্মেন্স বেড় করে নিতে পারবে না। অবশ্যই আপনার স্যাটাকে ৬ গিগাবিট/সেকেন্ড রেটেড হতে হবে। যদি আপনার পিসিতে পুরাতন জেনারেশন স্যাটা ইন্টারফেস থাকে আর সেটাকে পরিবর্তন না করতে চান, আপনি পুরাতন জেনারেশন এসএসডি কিনতে পারেন, এতে অবশ্যই রীড রাইট স্পীড কম পাবেন, কিন্তু আপনার খরচ বেঁচে যাবে। পুরাতন জেনারেশন কন্ট্রোলারে নতুন জেনারেশন এসএসডি লাগিয়ে তেমন কোন সুবিধা দেখতে পাওয়া যাবে না।
আরেকটি বিষয় আপনাকে কনফিউজ করতে পারে, সেটা হচ্ছে স্যাটাকে গিগাবিট/সেকেন্ডে রেটিং করা হয়, কিন্তু এসএসডি'র স্পীডকে মেগাবাইট/সেকেন্ডে রেটিং করা থাকে। এখানে আপনাকে বলে রাখি, গিগাবিট মানে কিন্তু গিগাবাইট নয়, এদের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। গিগাবিট সাধারণত গিগাবাইট থেকে ৮ গুন ছোট হয়ে থাকে। মানে যদি কোন স্যাটা কন্ট্রোলারকে ৬ গিগাবিট/সেকেন্ড স্পীড দ্বারা রেটিং করা থাকে, আসলে সেটি ৭৫০ মেগাবাইট/সেকেন্ড পর্যন্ত স্পীড দিতে সক্ষম।
  • SATA III (6Gbps): 750MB/s
  • SATA II (3Gbps): 375MB/s
  • SATA I (1.5Gbps): 187.5MB/s
আরো বিষয় আপনাকে মনে রাখতে হবে, উপরে দেখানো স্পীড রেটিং গুলো শুধু মাত্র তাত্ত্বিক স্পীড, কিন্তু রিয়াল লাইফে এতোটা পারফর্মেন্স পাওয়া যায় না। বেশিরভাগ SATA III এসএসডি সর্বচ্চ ৫০০-৬০০ মেগাবাইট/সেকেন্ড পর্যন্তই স্পীডে উঠতে পারে। আজকে অনেক নতুন ইন্টারফেস কম্পিউটারে ব্যবহৃত হতে দেখা যাচ্ছে, কিন্তু কেবল প্রথম স্টেজে, সবার কাছে পৌছাতে এখনো অনেক দেরি রয়েছে।

ক্যাপাসিটি

ক্যাপাসিটি কনসেফট সহজেই বুঝতে পারা যায়, এদ্বারা বুঝানো হয় কতোটুকু ডাটা স্টোর করা যাবে। যদিও এসএসডি হার্ড ড্রাইভ থেকে অনেক বেশি ফাস্ট, কিন্তু এখনো পর্যন্ত হার্ড ড্রাইভের মতো ক্যাপাসিটি অর্জন করতে পারে নি। সাথে এসএসডির ক্যাপাসিটি অনুসারে দাম একেবারে আকাশ ছোঁয়া। বর্তমানে ৬৪ জিবি থেকে শুরু করে ৪ টেরাবাইট পর্যন্ত সিঙ্গেল ক্যাপাসিটি ওয়ালা ড্রাইভ দেখতে পাওয়া যায়। যেখানে হার্ড ড্রাইভ ১০-১৫ টেরাবাইট হার্ড ড্রাইভ আরামে কিনতে পাওয়া যায়।
এসএসডিতে স্পীডের দিকে অনেক সুবিধা থাকলেও ক্যাপাসিটিতে এসএসডি হার্ড ড্রাইভের কাছে হেরে যায়, বিশেষ করে দামের দিকে। হার্ড ড্রাইভের প্রতি জিবি'তে আপনার অনেক কম টাকা খরচ করতে হয়, যেখানে এসএসডি অনেক কস্ট পরে। এসএসডি মূলত ফ্যাশ নির্ভর মেমোরি, যার মধ্যে ফ্ল্যাশ চিপ থাকে। একটি ২৪০ জিবি এসএসডিতে ১২০ জিবি এসএসডির তুলনায় প্রায় দিগুন চিপ থাকে।

রীড রাইট স্পীড

রীড রাইট স্পীড বলতে বুঝানো হয়, ড্রাইভটি প্রত্যেক সেকেন্ডে কতোটকু ব্যান্ডউইথ হ্যান্ডেল করার ক্ষমতা রাখে। এখানে বেশি রীড রাইট স্পীডে সুবিধা হচ্ছে, আপনি গ্রেট বুটিং টাইম পাবেন, ফাস্ট গেমিং করতে পারবেন, দ্রুত অ্যাপ্লিকেশন লোড করতে পারবেন, এক কথায় যেকোনো কাজে হাই স্পীড রীড রাইট স্পীড পাওয়া যাবে, যেমন ধরতে পারেন উইনর‍্যার ব্যবহার করে অনেক দ্রুত বড় সাইজের আর্কাইভ ডিকমপ্রেস করতে পারবেন।
তবে এই বিষয়টি মনে রাখবেন, একটি এসএসডিকে তার প্রস্তুতকারী কোম্পানি যে স্পীড রেটে রেটিং করেছে, রিয়াল ওয়ার্ল্ড ইউজের সময় সেই স্পীড কখনোই পাবেন না, কেনোনা তারা হাই পারফর্মেন্স সিস্টেমে ড্রাইভটিকে টেস্ট করে। যদি একটি ড্রাইভকে ৭০০ মেগাবাইট/সেকেন্ড স্পীড রেটে রেটিং করা থাকে, রিয়াল লাইফে সেটা কেবল ৫০০-৬০০ মেগাবাইট/সেকেন্ড স্পীডই প্রদান করতে সক্ষম হবে!

উইন্ডোজ এক্সপি, ভিস্তা ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন

যদি আপনার কম্পিউটারে এসএসডি লাগানো থাকে, তবে আমি বলবো অবশ্যই মডার্ন অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করুণ। উইন্ডোজ ৭ এর পর থেকে যেকোনো ভার্সন ব্যবহার করতে পারেন এবং উইন্ডোজ এক্সপি, ভিস্তাকে ত্যাগ করুণ। এই পুরাতন অপারেটিং সিস্টেম গুলো সলিড স্টেট ড্রাইভের জন্য ট্রিম কম্যান্ড সমর্থন করে না; সাধারন হার্ড ড্রাইভে যখন কোন ডাটা ডিলিট করা হয়, এটির শুধু অ্যাড্রেস ডিলিট হয়, কিন্তু ফাইলটি ফিজিক্যালি সেখানে থেকেই যায়, ততোক্ষণ থাকে যতোক্ষণ ড্রাইভকে ওয়াইপ (Wipe) না করা হয় বা আরেকটি ফাইল সেখানে রাইট করা হয়। কিন্তু মডার্ন অপারেটিং সিস্টেমে সলিড স্টেট ড্রাইভের জন্য ট্রিম কম্যান্ড থাকে, যেটাতে কোন ফাইল সম্পূর্ণ রূপে রিমুভ করতে ওভার-রাইট বা ওয়াইপ করার প্রয়োজন নেই। ডিলিট করার ফাইলের সেক্টরটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফাকা হয়ে যায়।
যদি অপারেটিং সিস্টেম ট্রিম সমর্থন না করে, সেক্ষেত্রে সলিড স্টেট ড্রাইভেও ফাইলটি সেক্টরে থেকে যায়, শুধু অ্যাড্রেস ডিলিট হয়। এখন নতুন কোন ডাটা সেখানেই রাইট করতে গিয়ে প্রথমে সেক্টরটি ফাকা হয়, তারপর নতুন ফাইল রাইট করে, এতে কিছুটা বেশি সময় লাগে। আর এজন্য পুরাতন অপারেটিং সিস্টেমের সাথে এসএসডি লাগানো থাকলেও আপনার সিস্টেম স্লো কাজ করতে পারে। মডার্ন অপারেটিং সিস্টেমে আগে থেকেই ট্রিম এনাবল করা থাকে, ব্যাস সেখানে হাত দেওয়ার প্রয়োজন নেই।

এসএসডি আপনার জন্য কতোটা গুরুত্বপূর্ণ?

সর্বশেষে যেটা আলোচনা করতে চাই, এসএসডি আপনার জন্য কতোটা গুরুত্বপূর্ণ! এটি কতোটা লাস্টিং করে। দেখুন, এসএসডিতে কোন মুভিং পার্টস থাকে না তাই এতে মাকানিক্যাল ফেইলিউরের কোন চান্স থাকে না, তবে পাওয়ার ফেইলের ফলে বা এক কথায় কারেন্ট চলে যাওয়ার সময় ধপ করে কম্পিউটার বন্ধ হয়ে গেলে এসএসডিতে ডাটা কপারটেড বা ড্রাইভ ফেইল করতে পারে। যদি এসএসডির এভারেজ লাইফ টাইম নিয়ে আলোচনা করা হয়, এটি মোটামুটি ৫-৭ বছর পর্যন্ত চলতে পারবে তারপরে ফেইল হতে পারে।
এখন কথা বলি এটি কতোটা গুরুত্বপূর্ণ সেই ব্যাপারে, দেখুন যদি আপনার বাজেট অনেক টাইট হয়, সেক্ষেত্রে স্পীডের কথা ভুলে যান, জাস্ট কম টাকা দিয়ে আরো অনেক ক্যাপাসিটির হার্ড ড্রাইভ কিনে ফেলুন। যদি যথেষ্ট টাকা থাকে এবং পিসির পারফর্মেন্স সত্যিই বৃদ্ধি করার চিন্তা করে থাকেন, এক্ষেত্রে এসএসডিতে ইনভেস্ট করতে পারেন।

এই ছিল কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য যেগুলো আমি মনে করি আপনার জানা প্রয়োজনীয় ছিল। তো আপনি কি এসএসডি কিনতে আগ্রহী? অবশ্যই নিচে টিউমেন্ট করে আমাদের জানান! যদি এই টিউনে কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কভার করতে মিস করে ফেলি, অবশ্যই সেটার সম্পর্কেও নিচে টিউমেন্ট করে জানিয়ে দিন!


EmoticonEmoticon