মাল্টিমিটার ব্যবহার করে কিভাবে ট্রানজিস্টর এর লেগ বের করার পদ্ধতি

মাল্টিমিটার ব্যবহার করে কিভাবে ট্রানজিস্টর এর বেজ, ইমিটার ও কালেক্টর লেগ বের করা

মাল্টিমিটার দিয়ে কিভাবে কোনো ট্রানজিস্টর এর বেজ, ইমিটার ও কালেক্টর (Base, Emitter & Collector) বের করা যায়? কিংবা আমার কাছে যে ট্রানজিস্টর টি আছে সেটি ভালো আছে কিনা তা মাল্টিমিটার দিয়ে কিভাবে বুঝবো? – এধরনের প্রশ্ন আমাদের ইলেকট্রনিক্সে প্রায় প্রতিদিনই আসে সহজ উপায়

সাধারণত ট্রানজিস্টর টির গায়ে যদি মডেল নাম্বার লেখা থাকবে কিংবা মডেল জানা থাকে, তাহলে গুগোলে সেটি লিখে সার্চ দিলেই ট্রানজিস্টর টির পিনআউট- অর্থাৎ কোন পিন বেজ, কোন পিন ইমিটার অথবা কালেক্টর জানা যায়। আবার ট্রানজিস্টর এর ডাটাশিটেও পিনআউট লেখা থাকে।

এই সহজ পদ্ধতির সমস্যা

কিন্তু প্রস্তুতকারক কোম্পানি প্যাকেজভেদে ট্রানজিস্টর এর পিনআউট অনেক সময়ই ভিন্ন রকম হয়। নিচের উদাহরণ টি দেখুন-

মাল্টিমিটার ব্যবহার করে কিভাবে ট্রানজিস্টর এর লেগ


চিত্রে 2N2222 ও BC547 ট্রানজিস্টর দুটির দুই রকম পিনআউট দেখানো হয়েছে। এখানে,

E = Emitter,

C = Collector ও

B = Base.

এসমস্ত ক্ষেত্রে নব্যহবিস্ট ও ইঞ্জিনিয়ারদের কে খুব বিপাকে পড়তে হয় এই ভেবে যে –“আমার কাছে যে ট্রানজিস্টরটি আছে সেটির লেগ কেমন। কোন পিন কে আমি বেজ, কালেক্টর, ইমিটার ধরে সার্কিটে লাগাবো?!! ভুলভাবে লাগালে তো সার্কিট কাজই করবে না!”

আবার কখনও কখনও ট্রানজিস্টরের গায়ে মডেল নাম্বার লেখা থাকেনা অথবা ইন্টারনেটে উক্ত ট্রানজিস্টর টির ডাটাশিট পাওয়া যায়না, তখন কী উপায়??

এসব ক্ষেত্রেই প্রয়োজন হয় মাল্টিমিটার দিয়ে ট্রানজিস্টরের লেগ বের করবার। এর জন্য রেজিস্ট্যান্স বা ডায়োড মাপবার সুবিধা আছে এরকম একটি মাল্টিমিটার দিয়ে সহজেই পিনআউট বের করে নেয়া যায়।


ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের (Electrical Engineering) জন্য গুরুত্বপূর্ণ ৭৫ টি ছোট প্রশ্ন ও উত্তর

ট্রানজিস্টরের লেগ বের করাবার সুবিধা কী

এরফলে নিশ্চিত হওয়া যায় কোন লেগটি কী। কারন ডাটাশিট ও নেটে প্রাপ্ত তথ্য অনেক সময়ই বেশ জটিল ও বিভ্রান্তিকর। (উপরের 2N2222/BC547 ট্রানজিস্টরটির উদাহরণ দ্রষ্টব্য)

ট্রানজিস্টর টি ভালো আছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়।

শুরু করবো কিভাবে

এনপিএন (NPN) বা পিএনপি (PNP) উভয় ক্ষেত্রেই আমরা এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখবো-

• প্রথমেই মাল্টিমিটার দিয়ে ট্রানজিস্টরটির বেজ নির্ণয় করতে হবে

• এরপর বাকি ২টি পা (কালেক্টর ও ইমিটার) নির্ণয় করতে হবে

মাল্টিমিটার দিয়ে কিভাবে ট্রানজিস্টরের লেগ বের করবো

এখন ধাপে ধাপে মাল্টিমিটার দিয়ে ট্রানজিস্টরের লেগ বের করবার পদ্ধতি বর্ণনা করবো। এখানে উল্লেখ্য যে এনপিএন এবং পিএনপি উভয় ধরনের ট্রানজিস্টরের ক্ষেত্রেই একই পদ্ধতির প্রয়োগ হবে। নতুনদের বুঝবার সুবিধার জন্য ধাপে ধাপে তা বর্ণনা করছি।

NPN ট্রানজিস্টরের পিনআউট বের করার ক্ষেত্রে

বেজ নির্নয়

মাল্টিমিটার এর সিলেক্টর নব কে রেজিস্ট্যান্স/ডায়োড মাপার জন্য সেট করতে হবে।

ট্রানজিস্টরের ৩টি প্রান্তের যেকোন একটি কে এনপিএন ট্রানজিস্টরের বেজ অনুমান করে পরীক্ষা করি। তারজন্য- মাল্টিমিটারের পজেটিভ (লাল রঙের) প্রোব ট্রানজিস্টরের ঐ বেজ অনুমানকৃত পায়ে লাগিয়ে নেগেটিভ প্রোব (কালো রঙের প্রোব) অন্য দুইটি লেগ/প্রান্তে পর্যায়ক্রমে ঠেকিয়ে দেখতে হবে।

একই পরীক্ষা ট্রানজিস্টরের অপর দুটি লেগের ক্ষেত্রেও করতে হবে। অর্থাৎ অপর ২টি লেগ কে “এনপিএন বেজ” অনুমান করে পরীক্ষা করতে হবে।

যদি-
উভয় লেগ/প্রান্তেই কিছু রেজিস্ট্যান্স দেখায় তাহলে আমাদের অনুমানকৃত ঐ কমন লেগটিই এই ট্রানজিস্টরের “বেজ”। (শর্ট হলে রেজিস্ট্যান্স একদম শূন্য দেখাবে)

কিন্তু যদি-
শুধু একটি পায়ে কিছু রেজিস্ট্যান্স দেখায় আর অন্য পা টিতে কোন কিছুই না দেখায় তাহলে ট্রানজিস্টরটি পিএনপি অথবা নষ্ট। সেটি জানার জন্য নিচে পিএনপি ট্রানজিস্টর পরীক্ষা অংশটি দেখুন।

আমার পরীক্ষিত ট্রানজিস্টটির বাম পায়ে লাল প্রোব এবং মাঝের পায়ে কালো প্রোব ধরলে পরে মাল্টিমিটার টিতে এই মান দেখিয়েছে

এবং, আবারো বাম পায়ে লাল প্রোব এবং ডান পায়ে কালো প্রোব ধরলে নিচের মান টি মাল্টিমিটারে দেখিয়েছে-

পিএনপি (PNP) ট্রানজিস্টরের লেগ বের করা

বেজ নির্ণয়

আগের মতোই মাল্টিমিটার এর সিলেক্টর নব কে রেজিস্ট্যান্স/ডায়োড মাপার জন্য সেট করতে হবে।

ট্রানজিস্টরের ৩টি প্রান্তের যেকোন একটি কে পিএনপি (PNP) ট্রানজিস্টরের বেজ অনুমান করে পরীক্ষা করতে হবে। তারজন্য- মাল্টিমিটারের নেগেটিভ (কালো রঙের) প্রোব ট্রানজিস্টরের ঐ বেজ অনুমানকৃত পায়ে লাগিয়ে পজেটিভ প্রোব (লাল রঙের প্রোব) অন্য দুইটি লেগ/প্রান্তে পর্যায়ক্রমে ঠেকিয়ে দেখতে হবে।

একই পরীক্ষা ট্রানজিস্টরের অপর দুটি লেগের ক্ষেত্রেও করতে হবে। অর্থাৎ অপর ২টি লেগ কে “এনপিএন বেজ” অনুমান করে পরীক্ষা করতে হবে। উপরে প্রদত্ত চিত্রের অনুরূপ কিন্তু প্রোব ২টি উলটো নিতে হবে।

কালেক্টর ও ইমিটার নির্ণয় করা

ট্রানজিস্টর এর বেজ নির্নয় করবার পরেই আসে অন্য দুটি লেগ কোনটি কি তা বের করবার। ডিজিটাল মাল্টিমিটার দিয়ে এটি বেশ সহজ কাজ।

বেজ থেকে উভয় লেগের রেজিস্ট্যান্স তুলনা করতে হবে মাল্টিমিটার দিয়ে।

যে লেগের রেজিস্ট্যান্স বেশি সেটি উক্ত ট্রানজিস্টরের ইমিটার।

অপরদিকে যে লেগের রেজিস্ট্যান্স কম দেখাবে সেটি কালেক্টর।

তবে এনালগ মাল্টিমিটারের ক্ষেত্রে এটি বেশ দূরূহ কাজ। কারন এই রেজিস্ট্যান্সের মান মাত্র কয়েক ওহম হয়। ফলে এনালগ মাল্টিমিটার এর কাঁটার পরিবর্তন তেমন বোঝা যায় না। কিছু চর্চা ও অনুশীলনের মাধ্যমে এটিকে আয়ত্ব করতে পারবেন। তবে সুখের কথা হলো, এখনকার প্রায় সব এনালগ মাল্টিমিটারেই ট্রানজিস্টর পরীক্ষা করবার আলাদা অপশন আছে।

আমার নির্ণয়কৃত ট্রানজিস্টর টি কি

উপরে আমার তোলা ছবিগুলো খেয়াল করলে দেখা যাবে যে-
 ট্রানজিস্টর টির বাম পায়ে লাল প্রোব (পজেটিভ) ধরলে বাকি ২ পায়েই রেজিস্ট্যান্স মাপতে পারছি। সুতরাং এটি একটি এনপিএন (NPN) টাইপ ট্রানজিস্টর। এবং বাম পা টিই বেজ।
 ট্রানজিস্টরটির বাম দিকের লেগ (বেজ) থেকে মাঝের লেগের রেজিস্ট্যান্স দেখাচ্ছে ৩৬২। অপরদিকে ডানদিকের লেগে মান দেখাচ্ছে ৩৬৮ যা একটু বেশি।

সুতরাং আমার ট্রানজিস্টরটির মাঝের লেগ টি কালেক্টর এবং ডানদিকের লেগ টি ইমিটার

মনে রাখার সহজ উপায়

ট্রানজিস্টর কিভাবে কাজ করে সেটি জানলে এই বিষয়টি বোঝা অনেক সহজ। 
নিচে সংক্ষেপে দিচ্ছি-
 এনপিএন (NPN) ট্রানজিস্টরের বেজ এ পজেটিভ প্রোব ধরলে বাকি ২টি লেগ এ রেজিস্ট্যান্স দেখাবে। নেগেটিভ প্রোব ধরলে দেখাবে না।
 পিনপি (PNP) ট্রানজিস্টরের বেজ এ নেগেটিভ প্রোব ধরলে বাকি ২টি লেগ এ রেজিস্ট্যান্স দেখাবে। পজেটিভ প্রোব ধরলে দেখাবে না।
 কোন কারনে যদি পজেটিভ ও নেগেটিভ উভয় প্রোব ধরলেই রেজিস্ট্যান্স দেখায় তাহলে বুঝতে হবে ট্রানজিস্টরটি নষ্ট। অথবা কোন প্রোব দিয়েই রেজিস্ট্যান্স দেখাচ্ছে না, কিংবা কোন কমন লেগ (বেজ) বের করা যাচ্ছে না সেক্ষেত্রেও ধরে নেয়া যায় ট্রানজিস্টরটি নষ্ট।


EmoticonEmoticon