স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করার কৌশল জেনে নিন

স্মরণশক্তি বৃদ্ধিসংক্রান্ত এই প্রবন্ধে শেখার পদ্ধতি, কিছু প্রয়োজনীয় উপদেশ, কৌশল এবং কিছু আধুনিক ব্যাখ্যা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আমরা জানি মানুষের ভেতরে শেখার সপৃহা এবং শক্তি বৃদ্ধি না পেলে তার ভেতর আলোকিত মানসিক উৎকর্ষতার উন্মোচন সম্ভব নয়। বেশ কয়েকটি ধাপে বিস্তৃতভাবে বোঝানো হয়েছে আসলে মেধা, মনন, স্মৃতি এবং এগুলোর সাথে শেখার পদ্ধতির সমন্বয় একজন প্রকৃষ্ট মানুষের মানবিকতা এবং ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে প্রতিষ্ঠাপ্রাপ্তি ত্বরান্বিত ও দৃঢ় করে। পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে এখন ব্যাপকভাবে মনোবিজ্ঞানীরা কাজ করছেন মানুষের মনের যে অংশটুকু অবচেতন থাকে তাতে পূর্ণ চেতনা ফিরিয়ে এনে তাকে আরো বেশি জ্ঞান গ্রহণ উপযোগী করে তোলার ব্যাপারে। বিভিন্ন প্রকার সাইকোঅ্যানালাইসিস বা মনোসমীক্ষণ এ ব্যাপারে খুব প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখে চলেছে। আমার দীর্ঘ জীবনের মনোবিজ্ঞান চর্চার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি যে, মানুষের স্মরণ এবং মেধার বৃদ্ধিতে খুব জটিল কোনো কিছুর প্রয়োজন পড়ে না। কেবল ইচ্ছা এবং কিছু প্রয়োজনীয় পরামর্শ এ ব্যাপারে রপ্ত করা উচিত। এতে করে পূর্ণ মাত্রায় সুষম ব্যক্তিত্ব গড়ে তোলা যেতে পারে সহজেই। পৃথিবী যেভাবে এগিয়ে চলছে তাতে করে বুদ্ধিমত্তা, মেধা, প্রজ্ঞা এবং স্মরণশক্তির তীক্ষ্ণতা না থাকলে জীবনে সাফল্য আশা করা একেবারেই বৃথা।
স্মৃতিশক্তি কী
মনোবিজ্ঞানে বহু বছর যাবৎ এ বিষয়ে তর্ক চলছে যে, আসলে স্মৃতিশক্তি কী? সহজভাবে এর উত্তর না দিয়ে প্রথমে একটু ঘুরিয়ে এর উত্তর দেয়ার চেষ্টা করা যাক।
ধরা যাক শনিবারের মধ্য দুপুরে কোনো এক ব্যক্তি একটি কাব্য রচনা করল। তার ঠিক এক সপ্তাহ পরে উক্ত ব্যক্তি শনিবারে সে যে কবিতাটি লিখেছিল তার প্রথম দুই পঙক্তি পুনরায় লিখতে চাইল। কিন্তু সমস্যা দেখা দিল তখনই যখন সে তা মনে করতে পারছিল না। এক্ষেত্রে সে বারবার তা মনে করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলো অর্থাৎ তার স্মরণশক্তি হারিয়ে ফেলেছে। সে ভুলে গেছে সে গত শনিবার কী লিখেছিল। এটা হচ্ছে মানুষের জীবনের একটা খুব সাধারণ সত্য যে, মানুষ ভুলে যায়। আমেরিকান একজন মনোবিজ্ঞানী এ ব্যাপারটিকে ‘থিংগামায়ব্ব’ বলে থাকেন। ভুলে যাওয়া, মনে করা, আবার ভুলে যাওয়া, আবার মনে করা মানুষের মানসিক জীবনের এক ধরনের বৈচিত্র্য। মানসিক ভাবমূর্তির প্রকৃত স্ফুরণ কেবল সজাগ মানসিকতাকেই বোঝায় না। মাঝেমধ্যে মানুষ ভুলে যাবে এটাও স্বাভাবিক। আমরা দৈনন্দিন জীবনে অনেক কিছু ভাবি, অনেক কিছু করে থাকি, অনেক সাধারণ কিংবা অসাধারণ দেনা-পাওনার সাথে সম্পৃক্ত হই। এগুলো হচ্ছে জীবনযাপনের বাস্তব চিত্র। কিন্তু কোনো কোনো সময় এমন কিছু বিষয়ে আমাদের খেয়াল রাখতে হয়, যা ভুলে গেলে একান্ত ক্ষতি হতে পারে। আমাদের চিন্তাশক্তির মতো স্মৃতিশক্তিকেও তাই বারে বারে পরীক্ষা করে নেয়া উচিত। কোনো মানুষ আছেন দৃঢ় স্মৃতিশক্তির অধিকারী। মনোবিজ্ঞানী উইলিয়াম জেমসের ধারণা, ‘মানুষের স্নায়ুকোষে রিচোনিউক্লেয়িক এসিডের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে মানুষের স্মরণশক্তি বৃদ্ধি পায়।’ মস্তিষেকর প্রতিটি কোষ এক সেকেন্ডে ১০ বিলিয়ন স্মৃতিশক্তি ধরে রাখতে পারে। খুব সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষের স্মৃতিভ্রষ্টতা দুই প্রকারের হয়ে থাকে যেমন-
স্বল্পমেয়াদি এবং দীর্ঘস্থায়ী। স্বল্পমেয়াদি স্মৃতিহীনতার জন্য সাধারণভাবে দায়ী করা হয় মস্তিষেকর বৈদ্যুতিক তরঙ্গ প্রবাহের হঠাৎ চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঘটনাকে। আর অন্যদিকে দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতিহীনতার জন্য মস্তিষেকর ভারসাম্যহীনতা সংক্রান্ত সমস্যা এবং রাসায়নিক উপাদানের আনুপাতিক অনুপস্থিতি দায়ী। পাশ্চাত্য মনস্তত্ত্ববিদ ডা. ম্যাকনোয়েল বিশ্বাস করেন মস্তিষক তরঙ্গের হঠাৎ বিচ্যুতি অনেক সময় মানুষের বুদ্ধিহীনতার জন্য দায়ী হতে পারে। এই ব্যাপারে তার বিস্তারিত গবেষণাকর্ম আমেরিকান ইনস্টিটিউট অব সাইকোলজিতে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
মনোবিজ্ঞান কী ব্যাখ্যা দেয়?
মনোবিজ্ঞানের মতে, স্মৃতি বলতে আসলে কিছু নেই। প্রথমেই এই ব্যাপারে বলা হয়েছে যে, স্মৃতিশক্তির ব্যাপারে এখনো মনোবিজ্ঞান বহু তর্ক চালিয়ে যাচ্ছে। মাঝে মাঝেই মানসিক রোগের ডাক্তাররা এমন ধরনের রোগীর শরণাপন্ন হন যারা বলে থাকেন-‘আমি যা পড়ি তা ভুলে যাই’ অথবা ‘আমি আজ দুপুরে কী খেয়েছি তা মনে করতে পারছি না’-এ ব্যাপারগুলো কি স্মৃতিভ্রষ্টতা? না আসলে তা নয়। স্মৃতিশক্তি হলো মানসিক জ্ঞানের হঠাৎ কমতি। ব্যক্তি হয়তো নিজেই বোঝে না তার মানসিক চিন্তাধারা থেকে কখনো কোনো নাম, ঠিকানা বা ব্যক্তির দৈনন্দিন জীবনের গতি বা বর্তমান সময়ের কার্যাবলির কোনো কোনো ব্যাখ্যা বাদ পড়ে যায়। যেটিকে আমরা সাধারণত স্মৃতিহীনতা বা স্মৃতিশক্তির দুর্বলতা বলি। মনস্তাত্ত্বিক রোব্যাকের মতে, ‘অনেক ক্ষেত্রে ব্যক্তির কল্পনা, পর্যবেক্ষণ, বিচার করার ক্ষমতা বা তার দূরদর্শী দৃষ্টিভঙ্গি এমন কোনো আচরণের প্রকাশ ঘটায়, যার কোনো অর্থ থাকে না।’ এ জাতীয় মানসিক মূল্যবোধকে মনোবিজ্ঞানের ব্যাখ্যায় ‘আপাত স্মৃতিভ্রষ্টতা’ বলে অর্থাৎ কেবল কোনো কিছু ভুলে যাওয়াই স্মৃতিহীনতা নয়- ডা. রোব্যাক তাই ব্যাখ্যা করেছেন।
বিভিন্ন প্রকার স্মৃতিশক্তি
ব্যাখ্যা এবং বৈশিষ্ট্যের ভিন্নতায় স্মৃতিশক্তির কিছুটা প্রকারভেদও সম্ভব হয়েছে। যেমন দুই প্রকার স্মৃতিশক্তিকে মনোবিজ্ঞান ব্যাখ্যা করতে পেরেছে। একটি হলো অভ্যাসগত স্মৃতিশক্তি এবং অপরটি হলো খাঁটি স্মৃতিশক্তি। সাধারণভাবে স্মৃতিশক্তিসংক্রান্ত আলোচনায় কিন্তু খাঁটি স্মৃতিশক্তির বিষয়টিই পূর্ণ মাত্রায় প্রকাশিত হয়েছে। ‘গত গ্রীষ্মের ছুটি আমি কীভাবে কাটিয়েছি’-এই যে ভুলে যাওয়া, এটা হলো খাঁটি স্মৃতিশক্তিহীনতা। আবার তাৎক্ষণিকভাবেই যদি এই বিষয়ে স্মরণশক্তি ফিরে আসে তবে সেটা হবে ‘চকিত পুনঃসংযোগ’। এই বিষয়টিকে আয়ত্ত করতে অর্থাৎ তাৎক্ষণিকভাবে কোনো কিছু মনে করতে কিছু অনুশীলন বা প্র্যাকটিস জরুরি। স্কুলের ছেলেমেয়েরা হরহামেশাই পড়া ভুলে যায়, গৃহিণীরা অভ্যস্ত দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডেও ভুল করে ফেলে এমনকি যে কেউ যে কোনো সময় প্রয়োজনীয় কোনো বিষয় হঠাৎ করে ভুলে যেতে পারে। তাৎক্ষণিকভাবে স্মৃতিশক্তিকে আবার চাঙ্গা করতে নিচের ছকটির দিকে লক্ষ করুন-
৭২৯৪৩৮৬৫১
এটি একবার পড়ুন। বই বন্ধ করুন এবং তাৎক্ষণিকভাবে ঠিক ছকটির মতো লিখতে চেষ্টা করুন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যাবে প্রথম পাঁচটি বর্ণ এবং খ প্রায় সবাই লিখতে পারবেন। খুব কম লোক সাতটি এবং আরো কম সংখ্যক ব্যক্তি ৯টি বর্ণই পুরোপুরি লিখতে পারবেন। এর কারণ হচ্ছে তাৎক্ষণিক স্মৃতি অধিকাংশ ব্যক্তি ধরে রাখতে পারে না বরং পুরনো স্মৃতি সহজে ধরে রাখা যায়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, ব্যক্তির স্মৃতিশক্তি দৃঢ় থাকে অথচ দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডে তার কিছুটা ওলটপালট হয়ে যেতে পারে। একে যুক্তিগত স্মৃতিশক্তিহীনতা বলে।
স্মরণ করার উপায়
স্মরণ করার উপায় বা কোনো কিছু মনে করার উপায় সহজ নয় বরং কিছুটা জটিল কর্ম। বিভিন্ন প্রকার গবেষণায় বিভিন্নভাবে স্মরণ করার উপায় সম্পর্কে ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। তবে প্রথমত এবং প্রধানত তিনটি উপায়ে একজন ব্যক্তি কিছু স্মরণ করতে চান। যেমন, এক-একজনের সাথে কথা বলে একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছানো। দুই-চিন্তা এবং মনকে একত্রে কাজে লাগিয়ে হারানো বিষয়ে মনে করতে থাকা এবং তিন-পুনঃপুনঃ চিন্তার দ্বারা হারানো ব্যাপারে মনোযোগ ফিরিয়ে আনা এবং তাকে স্মরণশক্তিতে ফিরিয়ে আনা। এ ব্যাপারটিকে ইংরেজিতে রিটেনশন বলে। তিনটি ব্যাপারকে আমরা যৌগিক মনে করি, মৌলিক নয়। বাস্তবে এই বিষয়গুলোই আসলে মৌলিক এবং হারানো কোনো কিছু স্মরণ করার প্রকৃষ্ট উপায়।
স্মরণশক্তি এবং বুদ্ধিমত্তা
স্মরণশক্তির সাথে বুদ্ধিমত্তার সম্পর্ক কী? আদৌ কোনো সম্পর্ক এদের মাঝে আছে কি? যদি কারো বুদ্ধিমত্তা খুব বেশি থাকে তবে কি তার স্মৃতিশক্তিও অধিক প্রখর? অথবা যদি কারো স্মৃতিশক্তি দুর্বল থাকে তবে কি তার বুদ্ধিমত্তাও নিচু মাত্রার? আসলে বুদ্ধিমত্তা হলো একটি কম্পিউটারের ইউনিটের মতো, যা তিনটি স্তরকে পরিচালনা করে। এই তিনটি বুদ্ধিমত্তাচালিত স্তর হলো- শেখা, পুনঃপুনঃ চিন্তা এবং অভিব্যক্তি। কাজেই স্মরণশক্তির সাথে বুদ্ধিমত্তার ওতপ্রোত কোনো মিল নেই। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, কোনো অশিক্ষিত কিংবা বুদ্ধিমত্তাহীন কোনো বালকের স্মরণশক্তি তীক্ষ্ণ হয়ে থাকে। আবার চৌকস বুদ্ধিমত্তা থাকা সত্ত্বেও কোনো বালকের স্মরণশক্তির দুর্বলতা লক্ষণীয় হতে পারে। এক্ষেত্রে উদাহরণ হতে পারেন আঠারো শতকের অশিক্ষিত ইংরেজ গণিত শাস্ত্রবিদ জেডিয়া বাক্সটন (১৭০৫-১৭৭১) যার মৌলিক বা প্রাতিষ্ঠানিক কোনো পড়াশোনা ছিল না অথচ তিনি গণিত শাস্ত্রের দুর্দান্ত সমস্যার সমাধান করতে পারতেন। অর্থাৎ বাক্সটনের বুদ্ধিমত্তা প্রখর ছিল। কিন্তু লন্ডনের রয়েল সোসাইটি কর্তৃক প্রদত্ত এক সমমাননা অনুষ্ঠানে বাক্সটনকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলতে পারেননি প্রথম কোন অঙ্কের ফর্মুলাকে তিনি বিশ্লেষণ করেছিলেন এবং এখানে বাক্সটন তার স্মরণশক্তির দুর্বলতার পরিচয় দেন।
ভালো স্মৃতিশক্তির সুবিধা
কোনো স্মৃতিশক্তি ভালো বলতে আমরা বুঝি যে, সে ব্যক্তি তাৎক্ষণিকভাবে তার স্মরণশক্তির প্রকাশ ঘটাতে পারে। অর্থাৎ তার ফটোগ্রাফিক স্মরণশক্তি ভালো। রাশিয়ান একজন মনোবিজ্ঞানী লুরিয়া এ ব্যাপারে দীর্ঘ গবেষণা শেষে সাম্প্রতিক এক রিপোর্ট প্রকাশ করেছেন। লুরিয়ার মতে, ফটোগ্রাফিক মেমোরি হলো মানুষের ধ্যানস্থ বা আত্মস্থ কোনো বিষয়ের বা চিন্তার তৎক্ষণাৎ বহিঃপ্রকাশ। এই ধরনের স্মৃতিশক্তিকে অর্থপূর্ণ চিন্তার দ্বারা আরো তীক্ষ্ণ করে তোলা যায়। আর কোনো পাঠক যদি এই জাতীয় অনুশীলন করেন তবে আশা করা যায় দীর্ঘ সময় তার স্মৃতি যে কোনো পাঠ ধরে রাখতে পারবে। ভালো স্মৃতিশক্তি যে কোনো কাজে সাহায্য করতে পারে। পড়াশোনার ক্ষেত্রে, চাকরির ক্ষেত্রে, শিক্ষকতার ক্ষেত্রে ভালো স্মরণশক্তির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে একঘেয়েমি কাটিয়ে ওঠার জন্যও স্মৃতিশক্তি খুব ভালো কাজ করতে পারে। কাজেই প্রথমত স্মরণশক্তির ওপর জোর দিতে হবে। মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখা সে জন্য একান্ত জরুরি। কেননা স্মৃতিশক্তি, মেধার বিকাশ ঘটে মানসিকভাবে। সুস্থ চিন্তা-ভাবনা, অর্থপূর্ণ কথোপকথন এবং সুস্থ দৈনন্দিন জীবন-যাপনে স্মৃতিশক্তির বিকাশ ঘটতে পারে সহজেই।
আমরা কেন ভুলে যাই
অনেক ক্ষেত্রে আমাদের মানসিক চিত্র যা ধরে রাখতে চায়, মস্তিষেকর তরঙ্গ তা অনেক সময় হারিয়ে ফেলে এবং আমাদের স্মৃতিশক্তি হ্রাস পায়। আমরা কেন ভুলে যাই এই ধারণাটি হতে পারে তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। স্মরণশক্তি কমে যাওয়ার আরো একটি কারণ হলো ঠিক যে সময়ে মস্তিষক কোনো বিষয় নিয়ে ভাবতে চায় তখন মানসিক শক্তি সে বিষয়ে তার আন্তরিকতা প্রকাশ করে। একে ‘ডিসকানেকটিভ থিংকিং’ বলে। মৌলিক তিনটি কারণে মানুষ কোনো কিছু ভুলে যেতে পারে। কারণ তিনটি হলো-
১. দুর্বল চিন্তাধারা
২. অব্যবহার
৩. হস্তক্ষেপ করা
এছাড়া আরো একটি ব্যাপার অবশ্য সব ক্ষেত্রে এটি মুখ্য নয়, তা হলো মানসিক চাপ। এটিও একটি কারণ কোনো কিছু ভুলে যাওয়ার ক্ষেত্রে। আমরা এই কারণগুলোর কিছুটা ব্যাখ্যা খুঁজব।
১. দুর্বল চিন্তাধারা
মানুষের চিন্তাশক্তির দুর্বলতা কোনো কিছু ভুলে যাওয়ার জন্য দায়ী। মানসিক চিন্তা-ভাবনা করার ব্যাপারে সতর্কতা এই বিষয়ে আলোচনায় প্রাধান্য পাবে। মানুষের মন হরহামেশাই নানা বিষয়ে ভাবতে থাকে। কখনো কখনো পূর্বে ভাবিত কোনো বিষয়ে হঠাৎ করে আবার ভাবতে চাওয়ার ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দেয়। এটি তাৎক্ষণিকভাবে মস্তিষেকর ওপর চাপ সৃষ্টি করে, যার ফলে কোনো কিছু হঠাৎ মনে করা সহজতর হয়ে ওঠে না। এই বিষয়টি দুর্বল চিন্তাধারার সাথে সম্পৃক্ত। ডা. হেনরি নাইট মিলার তার ‘প্র্যাকটিক্যাল সাইকোলজি’ গ্রন্থে লিখেছেন, মানুষের মনে কখনো দ্বিমুখী ভাবধারা এক সাথে প্রকাশ পায় না। যেমন-কেউ কখনো এক সাথে একই মনে ভাবে না ‘আমি সফল’ কিংবা ‘আমি ‘ব্যর্থ’। এ প্রসঙ্গে একটি কেস স্টাডি ব্যাখ্যার প্রয়োজন-‘আমি কোনো নাম মনে রাখতে পারি না, স্থান কিংবা বইয়ের নামও মনে রাখতে পারি না এবং এই সমস্যা আমার চাকরির ক্ষেত্রে আরো জটিল সমস্যার সৃষ্টি করে।’ স্বাভাবিকভাবে তার চিকিৎসা করা হলো ছোটখাটো ডিপ্রেশন মুড কাটানোর ওষুধের মাধ্যমে। আসলে তার চিন্তাশক্তির দুর্বলতার জন্য এ জাতীয় সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল। সে কী ভাবতে চাচ্ছে সেদিকে সে মনোযোগী নয়। এর ফলে স্থান, কাল, পাত্র সে সহজে ভুলে যায়। এ জন্য কোনো কিছু যেন সহজে ভুলে না যায় তার জন্য যখন কোনো কিছু মনে রাখতে চাইবেন, তখন সে ব্যাপারের প্রতি পূর্ণাঙ্গ মনোযোগ নিবদ্ধ করতে হবে। এতে করে সফলতা আসতে পারে।
২. অব্যবহার
বহু ক্ষেত্রে অধিকতর জ্ঞান অর্জন ভালো সব স্মৃতিশক্তির কিছুটা বিলুপ্তি ঘটাতে পারে। এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। মানুষের মস্তিষেকর সব তরঙ্গই একসাথে কোনো কিছু মনে রাখার জন্য ব্যবহৃত হয়। কিন্তু যখন অনেক জ্ঞানের চাপ মস্তিষেকর তরঙ্গে প্রবাহিত হতে থাকে তখন স্বাভাবিকভাবেই মানুষ কিছু কিছু ব্যাপার ভুলে যেতেই পারে। নর্থ ওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক এ আর গিলিল্যান্ড এ ব্যাপারে সর্বপ্রথম যুক্তি দাঁড় করান যে, মানুষের অর্থবহ চিন্তার প্রাবল্য মস্তিষক উর্বর করে তুলতে থাকলে, স্মৃতিহীনতা কাজ করতে পারে দ্রুত। একে তিনি ‘দ্রুত স্মৃতিশক্তির অকর্মণ্যতা’ বলেন। অতিরিক্ত পাঠ্যাভ্যাসজনিত স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া সমস্যা কমাতে জ্ঞানার্জনের একঘেয়েমি কাটানো উচিত। বিশেষ করে বিনোদনমূলক কার্যক্রম, টিভি দেখা, খবরের কাগজ পড়া, খেলাধুলায় মনোনিবেশ করা উচিত।
৩. হস্তক্ষেপ
কোনো কিছু পড়ার পরে সে ব্যাপারটি ভুলে যাওয়ার জন্য হস্তক্ষেপ দায়ী। হস্তক্ষেপ এ ক্ষেত্রে চিন্তাশক্তির মাঝে একাগ্রতা জন্মাতে বাধা দেয়। অনেক মনোবিজ্ঞানীর ধারণা, এর কারণ মস্তিষেকর রাসায়নিক পদার্থের ভারসাম্যহীনতা। কিন্তু বর্তমানে সুচারু গবেষণার ফলে জানা গেছে, মানসিক চিন্তাশক্তি ধরে রাখার পর্যায়ক্রমিক অনুপাত এ জন্য দায়ী।
ইউনিভার্সিটি অব এডিনবার্গের অধ্যাপক এ. সি এটকিন বলেন, মানুষের স্মরণশক্তির একটি ডিজিটাল রূপ আছে। এটি হলো মানুষ পর্যায়ক্রমে বা একাধারে ১২টি ডিজিটের বেশি মনে রাখতে পারে না এবং প্রায় প্রতিটি মানুষ কোনো কিছু কেনার পর একাধিকার টাকার হিসাব করে। এগুলো খুব সহজ ধরনের সাইকোলজি, কিন্তু স্মরণশক্তির ক্ষেত্র এর প্রভাব বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
মানসিক চাপ এবং স্মরণশক্তি
আলোচনার এ পর্যায়ে আমরা দেখতে পাব মানসিক চাপ কীভাবে স্মরণশক্তির ওপর প্রভাব ফেলে। প্রথমত মানসিক চপের সাথে আমরা সবাই কমবেশি পরিচিত। মানসিক চাপ সাধারণত অবচেতন মনের ওপর খুব দ্রুত ক্রিয়া করতে পারে। আমরা যখন কোনো বিষয় নিয়ে নিখুঁতভাবে চিন্তা করতে থাকি, তখন মনের চাপ অপেক্ষাকৃত কম থাকে। ডা. এলসির মতে, মানসিক চাপ অপ্রত্যাশিতভাবে অবচেতন মনের ওপর প্রভাব ফেলে এবং তাতে করে আমাদের স্মরণশক্তি কমে যেতে পারে। মনোবিশ্লেষকদের ধারণা, প্রাচীন যুগের মানুষের জীবনযাত্রার সীমাবদ্ধতা থাকায় তাদের মানসিক চাপ কম ছিল এবং সে কারণে তাদের স্মরণশক্তি ছিল ভীষণ তীক্ষ্ণ। নানা ক্ষেত্রে অপ্রীতিকর কোনো ঘটনার চাপ বা কাজ কিছু সময়ের জন্য স্মৃতিশক্তি হ্রাস পাওয়ার কারণ হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে। এজন্য মানসিক চাপের সাথে স্মরণশক্তির দুর্বলতার একটি মিল রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। সংক্ষিপ্তভাবে বলতে গেলে আমাদের ভুলে যাওয়ার মৌলিক কারণগুলো এরকম দাঁড়ায়-

(ক) দুর্বল চিন্তাশক্তির জন্য কোনো কিছুর প্রতি সঠিক মনোযোগের অভাবে আমরা ভুলে যাই।
(খ) আমরা বারবার আমাদের স্মৃতিশক্তিকে পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করি না।
(গ) আমাদের স্মরণশক্তি নানা কারণে বাধাপ্রাপ্ত হয়। এতে আমরা কোনো কিছু ভুলে যাই।
(ঘ) আমাদের আত্মমানসিক দ্বন্দ্বও অনেক ক্ষেত্রে আমাদের স্মরণশক্তির ক্ষীণতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
(ঙ) আমাদের দৈনন্দিন মানসিক চাপ বিভিন্ন সময়ে আমাদের স্মৃতিশক্তিকে আঘাত করতে পারে।
এছাড়া আরো কয়েকটি বিষয় আমাদের স্মৃতিশক্তি নষ্ট করতে পারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কারণগুলো হলো-মানসিক আঘাত বা মেন্টাল শক এবং শক থেরাপি। আর অপরটি হলো ওষুধের প্রতিক্রিয়া।
এছাড়া একেবারে নতুন একটি গবেষণা থেকে জানা গেছে, ধূমপান মানুষের স্মরণশক্তি কমিয়ে দিতে পারে। কিছু পরিমাণে উপরোক্ত বিষয়গুলো বিবৃত হলো।
শক
মানসিক আঘাত বা মেন্টাল শক অনেক সময় স্থায়ীভাবে স্মরণশক্তি হ্রাসের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। লন্ডন ইউনিভার্সিটি অব মেডিসিনের অধ্যাপক বার্নার্ড. ডি-এর মতে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে মানসিক আঘাত (কোনো দুর্ঘটনা, মৃত্যু, ডিভোর্স ইত্যাদি) ব্যক্তির মনোজগতে ব্যাপক পরিবর্তন আনে। লক্ষণীয় ব্যাপার হলো এর ফলে ব্যক্তির চিন্তাশক্তি এবং স্মরণশক্তির ওপরও অনেক চাপ পড়ে এবং এতে করে এই উভয় প্রকার শক্তির দুর্বলতা আসতে পারে। আবার শক থেরাপি বিভিন্ন প্রকার মানসিক রোগের চিকিৎসায় প্রয়োজনীয়তার ফলেও স্মরণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বিশেষ করে ইসিটি বা ইলেক্ট্রোকনভালসিভ থেরাপির ফলে স্মরণশক্তি হ্রাস পাওয়া অসম্ভব কিছু নয়।
ওষুধ
বহু মাত্রার বহুবিধ ওষুধের দীর্ঘ ব্যবহার স্বাভাবিকভাবে মানুষের স্মরণশক্তি কমিয়ে দিতে পারে। ভুলে যাওয়া সমস্যা এবং অন্যমনস্ক সমস্যার জন্য ওষুধ নানা সমস্যার জন্য দায়ী হয়। অনেক ক্ষেত্রে ওষুধ ব্যবহারের ফলে ‘ইলুশন’ বা ভ্রান্তির সৃষ্টি হয়, যা মানুষের স্মরণশক্তি বিনষ্ট করতে পারে। সিগমন্ড ফ্রয়েড এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করেন-দীর্ঘস্থায়ী ওষুধের ব্যবহার মনোবৈকল্য এবং স্মৃতিবৈকল্য সূচনা করে। সে জন্যই তিনি সাইকোঅ্যানালাইসিসের দ্বারা ব্যাপকভাবে মানসিক রোগীদের মনোপ্রবৃত্তি ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। অনেক ক্ষেত্রে যাদের ওষুধের ব্যবহার ক্রনিক হয়ে দাঁড়ায় তাদের অধিকাংশের স্মৃতিশক্তি অপেক্ষাকৃত কম থাকে।
ধূমপান
আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশন সম্প্রতি গবেষণা করে প্রমাণ করতে পেরেছে, ধূমপান মানুষের স্মৃতিশক্তি বিনষ্ট করে। এটি ক্রমাগত মানুষের মনোযোগের ধারার ওপর চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। ফলে স্মৃতি বিনষ্ট হয় খুব দ্রুত। ধারণা করা হয়, ধূমপান ছেড়ে দিলে অনেক ক্ষেত্রে স্মৃতিশক্তির পুনর্গঠন হতে পারে।
কীভাবে মনে রাখবেন
পূর্বেই আলোচনা করেছি মানুষ কীভাবে এবং কেন ভুলে যায়। মোটামুটি চারটি কারণে মনে রাখার ক্ষমতা মানুষের কমে যেতে পারে যেমন-
  • দুর্বল চিন্তাশক্তি
  • পুনর্বার চিন্তা করার অসমর্থতা
  • চিন্তাশক্তির মধ্যে হঠাৎ বিচ্যুতি মানসিক চাপ ইত্যাদি
আমরা এখন কীভাবে মনে রাখা যায় বা স্মরণশক্তি কীভাবে বাড়ানো বা বজায় রাখা যায় সে ব্যাপারে আলোচনা করব। তাতে করে চারটি ব্যাপার আসে যে চারটি ব্যাপারে আমাদের সতর্কতা থাকলে কোনো কিছু ভুলে যাওয়া বা স্মরণশক্তি কমে যাওয়া সমস্যা থেকে আমরা মুক্ত হতে পারব। প্রয়োজনীয় সেই চারটি বিষয়-
  • মনোযোগ বাড়ানো
  • বারবার ভুলে যাওয়া বিষয়টিকে মনে করতে চেষ্টা করা
  • যথা সম্ভব চিন্তাশক্তির ভেতর যেন বিরতি বা ছেদ না পড়ে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকা
  • মানসিক চাপ এড়িয়ে চলা এবং মানসিক চাপের উপসর্গ নিয়ন্ত্রণ করা
(১) চিন্তাশক্তি
আমরা পূর্বে চিন্তাশক্তির ব্যাপারে আলোচনা করেছি। দুর্বল চিন্তাশক্তি আমাদের স্মৃতি কমিয়ে ফেলতে পারে, এ ব্যাপারেও আমরা জানতে পেরেছি। গভীর চিন্তার প্রয়োগ দ্বারা কোনো কিছু মনে করা যায় সহজেই। আপনি যদি কোনো কিছুর প্রতি মনোযোগী হন, তাহলে সেই ব্যাপারটি দীর্ঘ সময় আপনি মনে রাখতে পারবেন। মনোযোগের বিষয়ে চারটি মূল ভিত্তির ব্যাপারে আমাদের ধারণা থাকা উচিত। এগুলো হলো-
  • অভ্যাস (Habit)
  • আগ্রহ (interest)
  • রিলাক্সেশন (relaxation)
  • আবেগ (emotion)
ইংরেজিতে এই চারটি শব্দকে একত্রে মিলিয়ে বলা হয়‘Hire’. অনেক মনোবিজ্ঞানী এই চারটি বিষয়বস্তু মানুষের মনোজগতের চিন্তাশক্তির ব্যাপকতা সৃষ্টি করতে পারে বলে ধারণা করেন। আন্তঃমানসিক দ্বন্দ্ব অধিক হারে আমাদের মানসিক শক্তি কমাতে পারে। আমাদের অনেকেরই এই ধরনের আন্তঃমানসিক দ্বন্দ্বের সমস্যা রয়েছে। অষ্টাদশ শতাব্দীতে ফ্রয়েডের বিভিন্ন অনুসারী ক্রমান্বয়ে মানসিক দ্বন্দ্ব সম্বন্ধে বিস্তারিত গবেষণা করেন। অবশ্য আরো আগে এমিল ক্রাপলিন এই ব্যাপারে বেশ কিছুদিন গবেষণা করেছিলেন। স্মরণশক্তির সাথে আরো যে একটি বিষয় খুব ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত তা হলো আবেগ এবং আবেগজনিত আগ্রহের প্রভাব। কোনো কাজ, কথাবার্তা এবং দৈনন্দিন জীবনযাত্রার সাথে গভীরভাবে আবেগ এবং আগ্রহ জড়িত না থাকলে আমাদের স্মৃতি প্রখর হতে পারে না। মোটামুটিভাবে মনোযোগের শক্তি বেড়ে গেলেই ধরে নেয়া অসংগত হবে না যে স্মৃতিশক্তিও সেই সাথে বেড়ে যায়।
(২) পুনঃপুনঃ মনে করার চেষ্টা
এই বিষয়টি খুব ভালো কাজ দেয় যে কেউ কখনো কোনো বিষয় ভুলে গেলে আতঙ্কিত না হয়ে যদি পুনঃপুনঃ মনে করার চেষ্টা করে, তবে এতে সাফল্য আসে। এই বিষয়টি হলো রিপিটেশন। আমি কেন সেই বিষয়টি খেয়াল করতে পারব না, এই কথাটি জোর দিয়ে চিন্তা করলেই স্মৃতিশক্তি কিছুটা চাঙ্গা হয়ে উঠবে। পুনঃপুনঃ চেষ্টা করার ক্ষেত্রে কয়েকটি জরুরি বিষয় মনে রাখা উচিত-
  • বিষয়টির ব্যাপারে বোধগম্যতা
  • বারবার পড়া
  • আবৃত্তির মতো পড়তে থাকা
  • পুরো বিষয়টা কী ছিল তা ভাবতে থাকা
(৩) চিন্তাশক্তির মধ্যে বিরতি
এটি হচ্ছে স্মরণশক্তি কমে যাওয়ার তৃতীয় কারণ। বাস্তবে এটি সমস্যাকে তীক্ষ্ণ করে তোলে। কোনো কিছু মনে করার সময় অহেতুকভাবে তাতে যদি অন্য কোনো চিন্তার উপস্থিতি ঘটে তবে স্মরণশক্তি দ্রুত হ্রাস পায়। বিভিন্নভাবে এই সমস্যাকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সমাধানগুলো হলো-
নিশ্চিত হোন আপনি কোন বিষয়টি মনে করতে চাইছেন।
  • যখন এই বিষয়টি ভাববেন তখন অন্য কোনো ব্যাপারে চিন্তা করবেন না।
  • সময় লাগলেও একই ব্যাপারে বারবার চিন্তা করতে থাকুন।
  • ডাইরিতে এই বিষয়ে কিছু লেখা আছে কিনা খেয়াল করুন। ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য যারা গণিত ভালোমতো মনে রাখতে পারে না তাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা বেশি দেখা দেয়। মনোবিজ্ঞানী ওয়েবার ডি স্যামুয়েলের মতে, মানুষ সহজে গণিতের সূত্র ভুলে যায়, কেননা অনেক ক্ষেত্রে একে নির্জীব এবং প্রাণহীন মনে করা হয়। অথচ গণিতের সূত্র মনে রাখাই সবচেয়ে সহজ। গণিতের সূত্র মনে রাখার শ্রেষ্ঠ পদ্ধতি হলো পুনঃ স্থাপন পদ্ধতি। এই পদ্ধতির দ্বারা গণিতের প্রথম থেকে শেষ এবং শেষ থেকে শুরু পর্যন্ত মনে রাখা সম্ভব হয়।
(৪) মানসিক চাপ মোকাবিলা
মানসিক চাপ মোকাবিলায় ব্যর্থ হলে স্মরণশক্তি বাড়ানো ততটা সহজ হয় না। তবে এই প্রসঙ্গে ঘুমজনিত সমস্যার ব্যাপারে ছোটখাটো  আলোচনা করা উচিত। ঘুম মস্তিষেক নিউরনগুলোকে প্রাণপ্রাচুর্যে ভরে রাখে। এতে করে মস্তিষেকর উর্বরতা বাড়ে। অনেক সময় নানা প্রকার হ্যালুসিনেশন এবং ডিলিউশনের জন্য অনিদ্রা এবং এর ক্রনিক উপসর্গগুলোকে অভিযুক্ত করা হয়। স্মরণশক্তিকে চাঙ্গা করতে সতর্ক থাকা উচিত হবে ঘুমের ব্যাপারে। ফ্রয়েডের মতে, ঘুমের স্বল্পতা বহুমাত্রিক ডিপ্রেশন সৃষ্টি করতে পারে, আবার ঘুমের স্বল্পতার জন্য মানসিক চাপ বাড়তে পারে, যা স্মরণশক্তিহীনতার জন্য দায়ী। ‘এ ডিকশনারি অব প্যাস্টোরাল সাইকোলজি’ গ্রন্থেও বিশেষভাবে আলোচিত হয়েছে মানসিক চাপের ব্যাপারে। এই গ্রন্থটির বিভিন্ন স্থানে উল্লেখ আছে, মানসিক চাপ পর্যায়ক্রমে মানুষের মস্তিষেকর যৌগিক কোষগুলোয় চাপ ফেলতে থাকার ফলে মানুষের মেধা ও স্মরণশক্তি কমে যায়। মোটামুটিভাবে এ ব্যাপারটি আমরা এই পর্যায়ে বুঝতে পেরেছি যে, কেবল স্মরণশক্তি বাড়ানো বা কোনো কিছু ভুলে না যাওয়ার জন্য একাগ্রতা এবং হারানো বিষয়টি বারবার মনের ভেতর খুঁজতে থাকা উচিত। চারটি প্রধান বিষয়ের দিকে খেয়াল রাখলেই মানুষের স্মরণশক্তিসংক্রান্ত সমস্যা দূর হতে পারে যেমন-
  • কোনো কিছুর প্রতি গভীর মনোযোগ দেয়া যে বিষয়টি আপনি ভাবতে চান।
  • পরিপূর্ণভাবে বিষয়টি মনে না পড়া পর্যন্ত ভাবতে থাকুন।
  • চিন্তাধারাগুলোকে একত্রিত করা এবং তা থেকে হারিয়ে যাওয়া বিষয়টি বাছাই করা। এতে করে আমাদের ভুলে যাওয়া সংক্রান্ত সমস্যার আশানুরূপ সমাধান আসতে পারে। তবে মনে রাখা উচিত যে বিষয়টি আপনি মনে করতে চাচ্ছেন, তাতে যেন আপনার পূর্ণ আগ্রহ থাকে। নইলে তা মনে করা কষ্টসাধ্য হতে পারে।
শেখার শক্তি বৃদ্ধির কৌশল
এবারে আমরা শেখার শক্তি বৃদ্ধির কৌশল সম্বন্ধে জানতে পারব। আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অব রোচেস্টারের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর তার ‘এক্সপেরিমেন্টাল সাইকোলজি’ গ্রন্থে উল্লেখ করেন বেশ কিছু কৌশল আয়ত্ত করতে পারলে শেখার শক্তি বেড়ে যেতে পারে। প্রসঙ্গত শেখার পদ্ধতিকে করতে হবে সহজতর। যেমন-ইংরেজি বা বাংলা বর্ণমালাগুলোর মধ্যে যেগুলো মনে থাকে না সে বর্ণগুলোর প্রত্যেকটি দিয়ে একেকটি অর্ধবোধক শব্দ তৈরি করতে হবে। এতে করে বর্ণগুলো মনে থাকবে সহজে।
বাংলা এবং ইংরেজিতে বেশ কিছু জটিল ব্যাকরণ এবং শব্দাবলি মনে রাখার ক্ষেত্রেও বিশেষ ধরনের কৌশল অবলম্বন করা হয়। এই ব্যাপারগুলো আয়ত্ত করতে পারলে শেখার শক্তি দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেতে পারে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ছড়ার ছন্দ দ্বারা অনেক কিছু মনে রাখা যেতে পারে। ইংরেজিতে একে রিমিং জিংগেলস বলে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ছাত্র-ছাত্রীরা কঠিন কোনো বিষয়ের চেয়ে সহজ অনেক বিষয় তাড়াতাড়ি ভুলে যায়। শতকরা ৭০ ভাগ ক্ষেত্রে এই বিষয়টি মনোবিজ্ঞানীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়। কঠিন কোনো বিষয় আয়ত্ত করতে যে পরিমাণ মেধা ছাত্র-ছাত্রীদের ব্যয় হয় সহজ কোনো বিষয় আয়ত্ত করতে সেই পরিমাণ মেধা ব্যয় হয় না, এটা ভুল ধারণা। বেশ কয়েকটি বিষয় আমাদের শেখার শক্তি বৃদ্ধি করে সহজেই যেমন-
  • সকালের দিকে পাঠাভ্যাসে অধিকতর সুফল আসে।
  • কোনো বিষয় দু’চার বারে বুঝতে না পারলে সে বিষয়টি রেখে অন্য কোনো সহজবোধ্য বিষয় নিয়ে ভাবা উচিত।
  • মনে রাখা উচিত মনের ওপর জোর সৃষ্টি করলে সফলতার চেয়ে ব্যর্থতা আসতে পারে বেশি।
  • কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হতে হবে।
  • অতিরিক্ত পাঠাভ্যাস কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্মরণশক্তি কমিয়ে ফেলতে পারে।
  • কোনো বিষয়ে ভাবতে হলে সে বিষয়টি এর আগে আপনি ভেবেছেন কি না তা ভেবে দেখুন।
  • স্মরণশক্তি বৃদ্ধির কার্যত কোনো ওষুধ নেই। কেবল কৌশল এবং চেষ্টা আপনাকে সফল করতে পারে।
  • সব সময় ভাবতে চেষ্টা করুন আপনি কিছু ভুলে যাননি। তাতে করে অনেক বিষয় আপনার সহজে খেয়াল থাকবে।
  • স্মরণশক্তি বৃদ্ধি এবং শেখার শক্তি বৃদ্ধির জন্য মানসিক উত্তেজনা পরিহার এবং সামগ্রিকভাবে মনকে ধীরস্থির রাখা উচিত।
পরীক্ষায় উত্তীর্ণের কৌশল
এই বিষয়টি বেশি গুরুত্বপূর্ণ তাদের জন্য যারা পরীক্ষায় অকৃতকার্য হন এবং পরীক্ষায় উত্তীর্ণের ব্যাপারে ব্যাপক আশাবাদী। যে কোনো শ্রেণীর অধ্যয়নরত ছাত্র-ছাত্রীর জন্যই এটা প্রয়োজনীয় একটি বিষয় আর তা হলো পরীক্ষায় কীভাবে ভালো ফল লাভ করা যায়। প্রাচীন গ্রিসের পণ্ডিতেরা জ্ঞান চর্চার পাশাপাশি কীভাবে এই জ্ঞানকে ধরে রাখা যায় সে ব্যাপারে নিত্যনতুন গবেষণায় ব্রত হতেন। তারা মনে করতেন জ্ঞানকে ধরে রাখতে হলে একে সহজভাবে মনের ভেতর ধরে রাখা চাই। যে ব্যাপারে যার আগ্রহ বেশি সে ব্যাপারটি খুব ভালো আত্মস্থ করতে পারে। এটি হলো একটি পুরনো সাইকোলজি। মনোবিজ্ঞানীদের ধারণা আরো ব্যাপক বিজ্ঞাননির্ভর এবং সহজ। তাদের মতে, জ্ঞানচর্চা জীবনের মৌলিক প্রয়োজনীয় একটি বিষয়। একে সহজভাবে মনে এবং মস্তিষেক ধরে রাখা হলো গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। পরীক্ষায় উত্তীর্ণের কৌশল কোনো ব্যাপক বিষয় নয় বরং যে বিষয়টি বা বিষয়গুলো আপনাকে পড়তে হচ্ছে প্রথমেই সে বিষয়টি বা বিষয়গুলোর প্রতি আপনার আগ্রহ গড়ে তুলুন। আমরা এর আগেও জেনেছি স্মরণশক্তি বা মনে রাখার ব্যাপারে ‘আগ্রহ’ খুব ভালো কাজ দেয়। পাশাপাশি এই বিষয়ে বা বিষয়গুলো পড়ার সময়ে আপনাকে আত্মনিয়োগ করতে হবে এবং বোধগম্যতার সৃষ্টি করতে হবে। অধ্যাপক নিচেলবার্গের মতে, ছেলেমেয়েদের মধ্যে যারা গণিত শাস্ত্র কম জানে বা যাদের ন্যূনতম আগ্রহ নেই রসায়ন, জীববিদ্যা বা পরিসংখ্যানের বিষয়ে তাদের উচিত হবে বোধগম্য উপায়ে এগুলো পড়া এবং এতে আত্মনিয়োগ করা। কোনো বিষয়ে পড়ার সময়ে সে বিষয় সম্বন্ধে আগ্রহ না রেখে অন্য কোনো বিষয় সম্বন্ধে ভাবতে গেলে বই আপনার চিন্তাশক্তিতে হস্তক্ষেপ বা সাময়িক বিরতি ঘটাবে, যা পরবর্তী সময়ে আপনাকে সেই বিষয় সম্বন্ধে স্মরণশক্তির ক্ষীণতার প্রকাশ ঘটাবে।
১. যেভাবে নোট তৈরি করবেন
 নোট তৈরি করা খুব ভালো অভ্যাস এবং এটি একাধারে আপনার পাঠে মনোযোগ বাড়াবে। বিশ্ববিখ্যাত কয়েকজন নোট গ্রহণকারী ব্যক্তিত্ব হলেন-চার্লস ডারউইন, রবার্ট লুইস স্টিভেনসন, এমিলি জোলা, টমাস হবস, জোনাথন অ্যাডওয়ার্ড, আইজ্যাক নিউটন, অ্যালবার্ট আইনস্টাইন প্রমুখ। নোট তৈরির ব্যাপারে কয়েকটি পরামর্শ-
  • সহজবোধ্য এবং আপনার মনোযোগ আকর্ষণকারী শব্দ দ্বারা নোট তৈরি করুন।
  • নোট যেন সুপাঠ্য হয়।
  • অত্যন্ত জটিল শব্দ নোট তৈরিতে যেন ব্যবহৃত না হয়।
  • কয়েকটি সহজবোধ্য পয়েন্টস দিয়ে নোট তৈরি করুন।
নোটের ব্যবহার
  • নোট পড়ে একটি বা একাধিক বিষয়ে একবারে জানা যায় এবং মনে রাখা যায়।
  • এগুলো মনে রাখার ক্ষেত্রে খুব ভালো ভূমিকা রাখে।
  • এটি প্রধান চিন্তা এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বুঝতে সাহায্য করে।
  • বিষয়টিকে সহজ এবং আকর্ষণীয় করে তুলতে নোটের খুব ভালো ভূমিকা থাকে।
পি-ভি ফর্মুলার নোট তৈরি এবং তা পড়লে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার সম্ভাবনা শতকরা ৯৫ ভাগ। এই পি-ভি ফর্মুলা হলো-
পি-তে প্রিভিউ বা পূর্বদৃষ্টি।
  • কিউ-তে কোয়েশচেন বা প্রশ্ন।
  • আর-তে রিড বা পড়া।
  • এস-তে সামারিজ বা সারসংক্ষেপ।
  • টি-তে টেস্ট বা পরীক্ষা করা বা অনুশীলন করা।
  • ই-তে ইউজ বা ব্যবহার।
  • ভি-তে ভিজ্যুটালাইজ বা মসো দৃষ্টিতে নিরীক্ষণ ইত্যাদি। মোটামুটি এই পি-ভি ফর্মুলায় নোট তৈরি করে পড়তে পারলে আশাতীত সাফল্য লাভ করা সম্ভব।
২. পুনর্বার পড়া
পরীক্ষার আগে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সম্বন্ধে ভালোভাবে জানা এবং স্মরণ রাখা উচিত, সেই বিষয়ে পুনর্বার পড়া উচিত। মনোবিজ্ঞানী ডেভিস এবং মুরের মতে, প্রত্যেক বিষয়কে ধীরস্থিরভাবে দুই থেকে চার বার পড়া উচিত এবং পুনর্বার পড়া উচিত। এতে করে বিষয়টি সহজে আত্মস্থ হবে এবং ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনা দূর হবে।
৩. পরীক্ষার কেন্দ্রে করণীয়
মানসিক দৃঢ়তা-অনেকে পরীক্ষার কেন্দ্রে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। ফলে অনেক জানা প্রশ্নের উত্তর দিতেও তারা ব্যর্থ হয়। অথচ পরীক্ষার কেন্দ্রে মানসিক একাগ্রতা তীব্রভাবে ধরে রাখা উচিত। মনে রাখা উচিত আমার প্রস্তুতি সফল এবং আমার পরীক্ষাও সফল হবে।
প্রশ্নপত্র পড়া
পুরো প্রশ্নপত্রটি একবার ভালো করে পড়ে নিতে হবে। কেবল চোখ না বুলিয়ে বরং ভালো করে প্রশ্ন পড়ার মাঝে পরীক্ষায় বেশি নম্বর পাওয়ার একটি উজ্জ্বল সম্ভাবনা থাকে। যে প্রশ্নকে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে তাকে কখনোই বর্ণনা দেয়া উচিত হবে না। এতে করে উত্তরের মান কমে যায় এবং পরীক্ষায় নম্বর কমে আসে।
প্রশ্নের উত্তর দেয়া
সহজ-সরল এবং সাবলীলভাবে প্রশ্নের উত্তর দেয়া উচিত। যে প্রশ্নকে অপেক্ষাকৃত কঠিন মনে হয় সেগুলোকে পরে উত্তর দেয়ার চেষ্টা করুন। প্রশ্নে ঠিক যেমনভাবে উত্তর চাওয়া হয়েছে ঠিক সেভাবে উত্তর দিন। ধারাবাহিকতা রক্ষা না হলে উত্তরের মান ভালো হলো না এটি ভুল ধারণা।
সময়
একটি প্রশ্নের উত্তরের জন্য কখনোই বেশি সময় ব্যয় করা উচিত নয়। এতে পরীক্ষায় সময়ের শেষের দিকে তড়িঘড়ি করে প্রশ্ন শেষ করার জন্য মানসিক চাপ বাড়তে থাকে, ফলে উত্তর পুঙ্খানুপুঙ্খ হয় না বরং সময়কে নির্দিষ্টভাবে ভাগ করে আগাগোড়া সময়ের ব্যবহার করে পরীক্ষা দিন। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য খুব বেশি কসরত না করে বরং স্বাভাবিকভাবে পড়াশোনা এবং পরীক্ষার যথাযথ মোকাবিলা করতে পারলেই সাফল্য আশা করা যায়। আমরা অনেক সময় পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের নানাবিধ বিষয় অনুধাবন করতে পারি না। নিচে এ ব্যাপারে সংক্ষিপ্তভাবে ব্যাখ্যা করা হলো-
পরীক্ষার নানাবিধ শব্দের আসল অর্থ
সংজ্ঞাঃ অর্থ কোনো কিছুর প্রকৃত অর্থ বোঝানো।
বর্ণনাঃ অর্থ কোনো বিষয় সম্বন্ধে বিস্তারিত জানানো।
আলোচনাঃ অর্থ তর্কের আলোকে কোনো কিছু বর্ণনা।
ব্যাখ্যাঃ অর্থ জানা বিষয়টিকে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা ইত্যাদি।
মনে রাখা উচিত পরীক্ষার কেন্দ্রে অযথা মানসিকভাবে ভেঙে পড়া উচিত নয়। বরং সাহসী এবং প্রাণবন্ত থাকা উচিত। পরীক্ষার মান খারাপ হতেই পারে। যে বিষয়ে কোনো আগ্রহ থাকে না এবং উদ্দেশ্য থাকে সে বিষয় সুচারু হয় না। এ জন্য কেবল পরীক্ষা পাসের জন্য না পড়ে বরং যথাযথ আগ্রহ নিয়ে পড়া উচিত। এতে করে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার বিষয়টি একেবারে অনায়াসে সহজ হবে।


EmoticonEmoticon