কিডনির জন্য উপকারি ও অপরিহার্য ৭টি খাবার জেনে নিন

কিডনি আমাদের শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গসমূহের মধ্যে একটি। অভ্যন্তরীণ এই অঙ্গটি বিকল হওয়ার অর্থ মৃত্যু অবধারিত। কিডনির কাজ শরীরের অপ্রয়োজনীয় পদার্থ বা বর্জ্যকে ছেঁকে বের করে দিয়ে পুষ্টি উপাদানটুকু গ্রহণ করা। দুটি কিডনির মধ্যে একটিও যদি বিকল হয় কিংবা দুটি কিডনিই যদি আংশিক বিকল হয়, তবে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকা থেকে বহু খাবার চিরতরে বাদ পড়ে যাবে। অনিয়ম করলে কিছুদিনের মধ্যে বাকি অংশটুকুও বিকল হয়ে যাওয়ার সমূহ আশঙ্কা থাকবে। তাই কিডনি সুস্থ রাখতে পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাসের বিকল্প নেই। কিডনির জন্য উপকারি ও অপরিহার্য ৭টি খাবারের তালিকা নিচে দেয়া হলো:
১) ডিমের সাদা অংশ: যদি কিডনির সমস্যা থাকে, আপনার শরীরে প্রয়োজন হবে এ ধরনের প্রোটিন যাতে ফসফরাসের মাত্রা কম। আর সেখানেই ডিমের সাদা অংশের ভূমিকা অপরিসীম। প্রোটিনজাতীয় খাবারের অন্য যে উৎসসমূহ রয়েছে, তার মধ্যে ডিমের সাদা অংশে ফসফরাসের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে কম। কিডনির সমস্যা থাকলে, আপনার উচিত ডিমের কুসুম বা হলুদ অংশ সম্পূর্ণভাবে পরিহার করা।
২) ফুলকপি: সবজির মধ্যে ফুলকপি কিডনির জন্য অত্যন্ত উপকারী। ফুলকপি কেটে তাতে গোলমরিচ ও লবণ মিশিয়ে সেদ্ধ করা বা স্বাস্থ্যসম্মত পদ্ধতিতে রান্না করা যেতে পারে। এই সবজিটি আপনার শরীরে প্রতিদিন প্রবেশ করা বিষাক্ত উপাদানসমূহের শত্রু।
৩) বাধাকপি: কিডনি সমস্যা প্রতিরোধে ও এ সমস্যায় আক্রান্তদের জন্য বাধাকপি আরেকটি অপরিহার্য সবজি। বহুস্তরবিশিষ্ট এ সবজিটি ফাইটোকেমিক্যালসের অন্যতম উৎস। শরীর ও ত্বকের কোষকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা, উজ্জ্বল ত্বকের জন্য বাধাকপি বরাবরই অপ্রতিদ্বন্দ্বী একটি সবজি। যারা কিডনির সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে ডায়ালাইসিস করিয়ে থাকেন, চিকিৎসকরা তাদের কাঁচা বাধাকপি সুন্দর করে কেটে কাঁচা খাওয়ার পরামর্শ দেন। অবশ্য, সাধারণভাবে অন্যদের জন্য বাধাকপি স্বাস্থ্যসম্মত পদ্ধতিতে রান্না করে খাওয়ার পরামর্শই দিচ্ছেন তারা।
৪) মাছ: মাছে রয়েছে প্রদাহ রোধকারী তেল, ওমেগা-৩, যা কিডনি সমস্যা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। একই সঙ্গে প্রোটিনের একটি ভালো উৎস মাছ। যে কোনভাবেই মাছ খাওয়া যেতে পারে। রান্না করে খেলে সবচেয়ে বেশি উপকার পাওয়া যাবে। তবে, পরিমিত ও ভালো তেলে মাছ ভেজেও খেতে কোন বারণ নেই।
৫) জুস: ফল কিংবা সবজির জুস দুটিতেই রয়েছে শরীরের বর্জ্য অপসারণে প্রয়োজনীয় গুণাগুণ। শরীর থেকে অপ্রয়োজনীয় পদার্থ বের করতে ভালো ও তাজা সবজি বা ফলের জুসের বিকল্প খুব কমই আছে। বিশেষ করে টাটকা সবজির জুসে রয়েছে ফাইটোকেমিক্যালস। যারা ডায়ালাইসিস প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন, তাদের জন্য এটা বিশেষভাবে উপকারী। কারণ, জুস কিডনি বিকল হওয়া প্রতিরোধ করে, কিডনির স্বাস্থ্য ভালো করে। আর ফলটা কেনার সময় একটু সতর্কভাবে বাছাই করে নেয়াটা জরুরি। যদি সেটা সম্ভব হয়, তাহলে ফলের জুস বানিয়ে পান করতে বাধা নেই।
৬) লাল ক্যাপসিকাম: লাল ক্যাপসিকাম বাজারে খুব একটা পাওয়া যায় না। কোনভাবে যদি এটা সপ্তাহের খাদ্য-তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন, তবে অনেক উপকার পাবেন। যে কোনভাবে ক্যাপসিকাম খাওয়া যেতে পারে। সবুজ নয়, লাল ক্যাপসিকাম কিডনি সমস্যায় আক্রান্তদের জন্য অন্যতম পাথেয়।
৭) পানি: পানি যে কোন সমস্যায় মহৌষধ। প্রতিদিন নিয়মিত কমপক্ষে ৭-৮ গ্লাস পানি পান করুন। অতিরিক্ত পরিশ্রম হলে, প্রয়োজনে আরও ৩-৪ গ্লাস বাড়িয়ে নিতে পারেন। শরীরের অধিকাংশ বর্জ্য অপসারণ করে পানি ও সেই সঙ্গে রক্তকেও পরিষ্কার রাখে। কিডনির ওপর অতিরিক্ত চাপ প্রতিরোধ করে।
খাবারের সঙ্গে টেবিল সল্ট বা কাঁচা লবণ খাওয়ার অভ্যাস থাকলে, তা এখনই পরিহার করুন। রান্নাতেও পরিমিত লবণ ব্যবহার করুন। কারণ, মাত্রাটা একটু বেশি হলে, সেটা আপনার কিডনিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। তেলজাতীয় খাবার বা ভাজাপোড়া কিডনির শত্রু। এ জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন। তেলে ভাজা খাবার খেলেও, তেলের পরিমাণটা যাতে নিতান্তই কম হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন। বাইরে খাবার খাওয়ার অভ্যাস করবেন না। কষ্ট করে হলেও বাড়িতেই রান্না খাবার খান ও সুস্থ থাকুন।


EmoticonEmoticon