কয়েকটি গোপন ফেসবুক সেটিংস (Hidden Facebook Setting) যেগুলো এখনই চেঞ্জ করা উচিত !

আপনি যদি আরও অধিকাংশ ফেসবুক ইউজারের মতোই হয়ে থাকেন, তাহলে আপনি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ক্রিয়েট করার পরে এবং স্মার্টফোনে ফেসবুক অ্যাপ ইন্সটল করার পরে সাধারনভাবেই সেগুলো ব্যাবহার করতে থাকেন এবং কোন ধরনের অ্যাডভান্সড সেটিংসে ঢোকার এবং সেগুলো রিভিউ করার কোন প্রয়োজন মনে করেন না। সাধারন ফেসবুক ইউজার হিসেবে এটাই স্বাভাবিক। কারণ আমরা কেউই কখনো ধারনা করিনি যে ফেসবুক আমাদের পার্সোনাল ডেটা কালেক্ট করবে। এই রিসেন্ট  #DeleteFacebook স্ক্যান্ডাল না হলে হয়তো আমরা কখনোই জানতেও পারতাম না। আপন লোককে বিশ্বাস করলে যা হয় আর কি ! 😜
যাইহোক, ফেসবুকের এই স্ক্যান্ডালের কারনে আপনার সম্পূর্ণ ফেসবুক আইডিটিই ডিলিট করে দেওয়ার আসলেই কোন মানে হয়না। তবে আপনি চাইলেই কিছু সেটিংস পরিবর্তন করে ফেসবুকের এই পার্সোনাল ডেটা কালেক্ট করার পরিমান কিছুটা কমিয়ে আনতে পারবেন, একেবারে বন্ধ করে দিতে না পারলেও। এসব সেটিংসের কয়েকটি আপনি ফেসবুক এবং মেসেঞ্জার অ্যাপের ভেতরে পেলেও কয়েকটি সেটিংস আপনাকে আপনার ফোনের সেটিংস থেকেও পরিবর্তন করতে হতে পারে। এসব সেটিংস পরিবর্তন করলে ফেসবুক আপনার আর কোন পার্সোনাল ডেটাই কখনো অ্যাক্সেস করতে পারবে না এমনটা না। তবে আগের তুলনায় কিছুটা কম ডেটা কালেক্ট করবে নিশ্চিতভাবেই। আর আপনার যদি নিজের পার্সোনাল ডেটা নিয়ে কিছু যায়-আসেনা তাহলে আপনি এগুলোর কিছুই না করে যেভাবে ফেসবুক ব্যাবহার করছেন সেভাবেই ব্যাবহার করতে পারেন। আর যদি যায়-আসে তাহলে এই আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন।

অ্যাপ পারমিশনস

এতদিনে আমরা সবাই নিশ্চই জানি যে ফেসবুক আমাদের সবার পার্সোনাল ডেটা যেমন আমাদের ফোনের কল হিস্টোরি, আমাদের টেক্সট মেসেজ ইত্যাদি ট্র্যাক করে আসছে এতদিন ধরে। এবং এই সব ডেটা মুলত ফেসবুক অ্যাক্সেস করছে তাদের অফিশিয়াল ফেসবুক অ্যাপ এবং অফিশিয়াল মেসেঞ্জার অ্যাপের সাহায্যে। এসব ডেটা ট্র্যাক করা বন্ধ করার সবথেকে ইফেক্টিভ এবং সবথেকে সহজ উপায় হচ্ছে এসব ডেটা অ্যাক্সেস করার পারমিশনই রিমুভ করে দেওয়া। অ্যান্ড্রয়েড ৬.০ এর আগে অ্যাপ পারমিশন সরাসরি রিমুভ করা সম্ভব ছিলোনা তবে ৬.০ এবং এর পরের সব অ্যান্ড্রয়েড ভার্শনে আপনি নিজের ইচ্ছামত ইন্সটল করা যেকোনো অ্যাপের পারমিশন এডিট করতে পারবেন। এর জন্য সরাসরি আপনার ফোনের সেটিংস থেকে ইন্সটলড অ্যাপস অর্থাৎ যেখানে আপনার ইন্সটল করা সব অ্যাপের লিস্ট দেখানো হয় সেখানে যলে যান এবং সেখান থেকে ফেসবুক অ্যাপ ও মেসেঞ্জার অ্যাপ খুজে বের করুন। এরপর অ্যাপ ইনফোতে ঢুকলে আপনি অ্যাপ পারমিশনস নামের একটি অপশন পাবেন। সেখান ঢুকলেই আপনি দেখতে পাবেন যে আপনি ফেসবুক অ্যাপ এবং মেসেঞ্জার অ্যাপকে কি কি পারমিশন দিয়েছেন। সেখান থেকে কন্টাক্টস, মাইক্রোফোন, ফোন এবং এসএমএস পারমিশন ডিজেবল করে দিন।

অ্যাপস অ্যান্ড সার্ভিসেস সেটিংস

আপনি যদি বাংলাদেশের অধিকাংশ সাধারন ফেসবুক ইউজারের মতো হয়ে থাকেন, তাহলে আপনি হয়তো আপনাকে মেয়ে হলে কেমন দেখতে লাগতো, আপনার বেস্ট তিনজন ফেসবুক ফ্রেন্ড কে, আপনার কোন ফ্রেন্ড সিক্রেটলি আপনার প্রেমে পড়েছে এসব মজার ফেক ইনফো দেখার জন্য ফেসবুক অনেক থার্ড পার্টি অ্যাপ এবং ওয়েবসাইট কানেক্ট করেছেন এবং কখনো ভেবে দেখারও প্রয়োজন মনে করেননি যে এসব অ্যাপ আপনার ফেসবুক প্রোফাইলের কোন কোন ডেটা এবং ইনফো অ্যাক্সেস করছে। এর থেকে ভালো কাজ আর হতেই পারেনা ! জাস্ট ভেবে দেখুন, আপনি একটি র‍্যান্ডম অ্যাপ বা ওয়েবসাইটকে আক্ষরিক অর্থেই আপনার নাম, অ্যাড্রেস, ইমেইল, ফোন নাম্বার, আপনার ফ্যামিলি মেম্বার এবং ফ্রেন্ডদের নাম ইত্যাদি আরও কতরকম ইনফোর অ্যাক্সেস দিয়ে দিচ্ছেন সেটি ট্রাস্টেড কিনা না জেনেই। এটা কত বড় বোকামি হতে পারে ! 😒

Facebook Messenger এর 21 টি গুরুত্বপূর্ণ Tips – সাথে বাংলা ভিডিও টিটোরিয়াল

Facebook Messenger এর 21 টি গুরুত্বপূর্ণ Tips – সাথে বাংলা ভিডিও টিটোরিয়াল


যাইহোক, কাজের কথায় আসি। এসব অ্যাপকে ফেসবুক থেকে রিমুভ করতে হবে। এর জন্য চলে যান আপনার ফেসবুকের সেটিংসে এবং সেখান থেকে Apps and websites অপশনটিতে চলে যান। এখানেই আপনি সবগুলো অ্যাপস এবং সার্ভিস দেখতে পাবেন যেগুলোকে আপনি আপনার ফেসবুক ডেটা অ্যাক্সেস করা পারমিশন দিয়েছেন।
এরপর এখান থেকে খুঁজে বের করবেন যে কোন কোন অ্যাপ সেফ এবং কোন কোন অ্যাপ আপনার দরকার হবে। এক্ষেত্রে আপনার কমন সেন্স ব্যাবহার করুন। যেমন, আপনি যদি পিন্টারেস্ট ব্যাবহার করেন তাহলে পিন্টারেস্ট রিমুভ করার দরকার নেই। এছাড়া আপনি নাম দেখেই বুঝতে পারবেন যে কোনটা সেফ আর কোনটা সেফ না। এখানে আপনি সেসব অ্যাপও দেখতে পাবেন যেগুলোর সাহায্যে আপনি নিজের বয়স দেখা, ক্লোজ ফ্রেন্ড কে তা বের করা এসব কাজ করেছেন। সেসব অ্যাপে ক্লিক করলেই আপনি দেখতে পাবেন যে সেসব অ্যাপকে আপনি না জেনেই আপনার কতরকম ইনফো অ্যাক্সেস করার পারমিশন দিয়ে রেখেছেন। সেসব অ্যাপ রিমুভ করতে জাস্ট অ্যাপটির পাশে টিক মার্ক দিয়ে রিমুভ অপশনটিতে ক্লিক করবেন।

অ্যাড লিমিটিং

এবার একটু অবাক হওয়ার জন্য নিজের প্রস্তুত করুন। কারণ, এবার আপনি জানতে চলেছেন যে ফেসবুক আপনার সম্পর্কে কি কি জানে এবং সেই অনুযায়ী আপনাকে অ্যাডস শো করে। আপনি হয়তো অনেকবার এমন পরিস্থিতিতে পড়েছেন যেখানে, ধরুন আপনি আজকে অনলাইন থেকে একটি ঘড়ি কিনলেন এবং এরপর থেকেই ফেসবুক আপনাকে ওই ধরনের ঘড়ি সম্পর্কিত আরও অনেক প্রোডাক্টের অ্যাডস দেখানো শুরু করলো। ফেসবুক কিভাবে জানলো যে আপনি এই ধরনের ঘড়ি পছন্দ করেন? এটা সম্ভব হয়েছে আপনার ব্রাউজিং হিস্টোরি ট্র্যাক করার মাধ্যমে। আপনি বলতে পারেন, আপনি অনলাইনে যেসব ওয়েবসাইট ভিজিট করছেন বা যেখানে যতরকম অ্যাক্টিভিটি রাখছেন, প্রায় সেই সবজায়গাতেই ফেসবুক আপনাকে ফলো করছে, এটা জানার জন্য যে আপনি কি ধরনের জিনিস পছন্দ করেন এবং আপনার ইন্টারেস্ট কি তা জানার জন্য। এসব জেনে কি হবে? এর ফলে ফেসবুক আপনাক্রে টার্গেট করে অ্যাড দেখাতে পারবে যাতে আপনি সবসময়ই এমন অ্যাড দেখতে পান যেগুলোতে আপনার ইন্টারেস্ট আছে। এই ধরনের সব অ্যাড প্রিফারেন্স দেখার জন্য আপনার ফেসবুকের সেটিংস থেকে Ads অপশনটিতে ক্লিক করুন।
এখানে আপনি আপনার সেই সকল ইন্টারেস্ট জানতে পারবেন, যেগুলো ফেসবুক আপনার সম্পর্কে জানে এবং যেগুলোর ওপরে ভিত্তি করে আপনাকে টার্গেটেড অ্যাডস শো করে। এমন এখানে আপনি আপনার ভিজিট করা ওয়েবসাইট, আপনার ফলো করা ফিল্ম-স্টার বা পাবলিক ফিগার বা আর্টিস্ট, আপনার ব্যাবহার করা অ্যাপস, সার্ভিসেস ইত্যাদি সবকিছু দেখতে পাবেন যেগুলো ফেসবুক আপনার সম্পর্কে জানে। এখান থেকে আপনার ইচ্ছামত যেকোনো কিছু আপনি নিজের ইচ্ছামত রিমুভ করে দিতে পারবেন যাতে ফেসবুক সেগুলো সম্পর্কে আপনাকে অ্যাডস দেখাতে না পারে। এরপর এর থেকে আরেকটু নিচে নামলে আপনি আরও অবাক হবেন।
এর নিচে দেখতে পাবেন যে ফেসবুক আপনাকে অ্যাড টার্গেট করার ক্ষেত্রে আপনার পার্সোনাল ইনফরমেশন যেমন আপনার স্কুল-কলেজ, আপনার লিভিং প্লেস, আপনার ওয়ার্কপ্লেস, জব টাইটেল এবং এমনকি আপনার রিলেশনশিপ স্ট্যাটাসও পর্যন্ত ব্যাবহার করে। আর আপনার ব্যাবহার করা ওয়েবসাইট এবং অ্যাপস তো খুবই সাধারন ব্যাপার। এখানে আপনি যা করতে পারেন, তা হচ্ছে অ্যাডস সম্পর্কিত যতরকম সেটিংস আছে এখানে সবগুলোই ডিজেবল করে দিতে পারেন। তার মানে এটা ভাববেন না যে ফেসবুক আপনাকে কোন অ্যাডই দেখাবে না। ফেসবুক আপনাকে অ্যাড অবশ্যই দেখাবে, তবে কিছুটা কম। আর আপনার পার্সোনাল ডেটা কালেক্ট করে সেই অনুযায়ী অ্যাড দেখিয়ে আপনাকে বিরক্ত করবে না।

কন্টাক্টস ডিলিট

আরও বেশি অবাক হতে চান? চলুন এবার একটু দেখে আসা যাক ফেসবুক এতোদিনে আপনার ফোনের কোন কোন কন্টাক্ট অ্যাক্সেস করেছে এবং তাদের ফোন নাম্বার কালেক্ট করেছে। আপনি যদি কখনো ফেসবুক মেসেঞ্জারে নিজের কন্টাক্ট লিস্টের অ্যাক্সেস দিয়ে থাকেন, তাহলে আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন যে আপনার পরিচিত যত মানুষ আছে, তাদের ফোন নাম্বার আপনি না জানলেও ফেসবুক ঠিকই জানে। বিশ্বাস হচ্ছে না? এই লিংকে ক্লিক করুন। এখানে আপনার সেই সকল কন্টাক্টস এবং তাদের ফোন নাম্বার দেখতে পাবেন যেগুলো এতদিন ফেসবুক আপনার থেকে কালেক্ট করেছে। ইম্বেড করা লিংকটি যদি ফিশিং লিংক বা এই ধরনের কিছু ভেবে থাকেন, তাহলে অরিজিনাল লিংকটি নিচে দিলাম। আপনার কমন সেন্স ব্যাবহার করে লেজিট লিংক কিনা বুঝে তারপরেই ক্লিক করবেন-
এখানে যেসব কন্টাক্টস দেখতে পাবেন সেগুলো আবার ওপর থেকে ডিলিট অপশনে ক্লিক করে সব কাল্কেট করা কন্টাক্টস ডিলিট করে দিতে ভুলবেন না। আর এরপরে যদি আপনি মেসেঞ্জারকে কন্টাক্ট অ্যাক্সেস করার পারমিশন না দেন, তাহলে ফেসবুক আর আপনার কোন কন্টাক্টের ডেটা অ্যাক্সেস করবে না।

তো এই ছিল কয়েকটি হিডেন ফেসবুক সেটিংস যেগুলো চেঞ্জ করে বা ডিজেবল করে আপনি আপনার প্রাইভেসি নিশ্চিত করতে পারবেন। আজকের মতো এখানেই শেষ করছি। আশা করি আজকের আর্টিকেলটিও আপনাদের ভালো লেগেছে। কোন ধরনের প্রশ্ন বা মতামত থাকলে অবশ্যই কমেন্ট সেকশনে জানাবেন।
#Happy_Facebooking
#Make_Facebook_Great_Again 🐸


EmoticonEmoticon